আজ রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না
আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। হাদিসে এ রাতের অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। হযরত মোহাম্ম’দ (সা.) থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এ রাত মু’সলিম উম্মাহর কাছে ‘নাজাতের উসিলা ও পবিত্র’ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।
প্রিয় নবী (সা.), সলফে সালেহীন, ও বিজ্ঞ মনীষীগণ এ রাতটিকে অ’ত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। অনুরূপভাবে যুগে যুগে বিশ্ব মু’সলিম উম্মাহ এই রাতকে পবিত্র শবে বরাত তথা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে নিবিড় এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পালন করে আসছেন। শবে বরাত মূলত ফার্সি শব্দ। এটি আরবী শব্দ নয় বলে পবিত্র কোরানে হুবহু ‘শবে বরাত’ শব্দের উল্লেখ নেই। যেমনটি নেই নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা ইত্যাদি।
কিন্তু পবিত্র কোরানে সালাত, সওম ইত্যাদি দ্বারা যেমন নামাজ ও রোজা বুঝানো হয়েছে তদ্রুপ মহান আল্লাহ পাক সূরা দূখানের একটি আয়াতে ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ” দ্বারা ‘শবে বরাত’ বুঝিয়েছেন বলে মোফাসসেরিনে কেরাম ও সলফে সালেহীনগণের অ’ভিমত। শব অর্থ রাত, ‘বরাআত’ অর্থ মুক্তি, ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাত অর্থ মুক্তি ও ভাগ্যের রাত। আরবীতে বরাআত এর আরেক অর্থ হলো বিচ্ছিন্নতা। যার সাথে অবস্থান অ’পছন্দনীয়, তার সঙ্গ হতে দূরে থাকা। [সূত্র: মুফরাদাতে ই’মাম রাগেব, পৃষ্ঠা ৪৫]
হ’জরত ইবনে ওম’র (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এমন পাঁচ রাত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। রাতগুলো হলো, জুমা’র রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত), দুই ঈদের রাত।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস: ৬০৮৭) অন্য হাদিসে এসেছে, হ’জরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি একদিন হ’জরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনাকে শাবান মাস ব্যতীত অন্যকোনো মাসে এতো অধিক পরিমাণে রোজা রাখতে দেখিনি।
হ’জরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা ওই মাস যে মাস স’ম্প’র্কে অধিকাংশ লোকই গাফেল থাকে। এটা রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী মাস। এটা এমন মাস, যে মাসে মানুষের আমলসমূহ আল্লাহতায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। আমা’র আকাঙ্ক্ষা যে, আমা’র আমল আল্লাহতায়ালার দরবারে এ অবস্থায় পেশ হোক যে, আমি রোজাদার। -নাসায়ি ও শোয়াবুল ঈ’মান এই বর্ণনার সনদ দুর্বল হলেও তা গ্রহণযোগ্য। হাদিস বিশারদগণের মতে, ফাজায়েলের ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস আমলযোগ্য। তা ছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে এবং আইয়ামে বিজ, অর্থাৎ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টিও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হাদিস শরিফে আছে, ‘হ’জরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাই’মা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মু’সনাদে আহম’দ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬)।
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমা’র ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃ’ত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গু’লি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গু’লি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে আয়েশা, তোমা’র কি এই আশ’ঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমা’র হক নষ্ট করবেন? ”
আমি উত্তরে বললাম, “না, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমা’র এই আশ’ঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃ’ত্যুবরণ করেছেন কি-না। ” নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি জানো এটা কোন রাত? ” আমি বললাম, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। ” রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন এরশাদ করলেন, “এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। ” (শুআবুল ই’মান, হাদিস: ৩৫৫৪)