সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বিএনপির

সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বিএনপির
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী নারীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে নারী কর্মীদের শিশুর যত্ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

তারেক রহমান বলেন, শিশু পরিচর্যা কোনো অনুগ্রহ নয়; বরং এটি একটি মৌলিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অংশ। যেমন সড়ক বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনের সাফল্যের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। তিনি উল্লেখ করেন, ডে-কেয়ার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ নারী কর্মসংস্থান বাড়াতে, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর্থিক স্থিতিশীলতা আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তারেক রহমানের দাবি, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এক শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি যোগ হতে পারে।

বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী, সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে এবং সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে এই সুবিধা চালুর জন্য একটি জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার বাধ্যতামূলক করা হবে। যেসব নিয়োগকর্তা শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে, তাদের কর ছাড় ও কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) ক্রেডিট দেওয়ার প্রস্তাবও এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদানের উদ্যোগও থাকবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

তারেক রহমান আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (IFC) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কারখানায় শিশু পরিচর্যার সুবিধা রয়েছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার তুলনামূলক বেশি, অনুপস্থিতি কম এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের মধ্যেই ব্যয় পুনরুদ্ধার করতে পারে। তাই, নারী শ্রমিকদের সুবিধা নিশ্চিত করা শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি লাভজনক অর্থনৈতিক কৌশল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, কেউ কেউ আবার পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। এতে দেশ হারায় সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতা। তাই বিএনপি এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়, যেখানে কোনো নারীকে তার পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, দেশে পুরুষদের ৮০ শতাংশের বিপরীতে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ মাত্র ৪৩ শতাংশ। এই বৈষম্য দূর করতে হলে শিশুসেবা ব্যবস্থাকে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ করা অপরিহার্য।

তিনি জানান, বিএনপি ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই সমানভাবে অংশ নেবে। শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নকে বিএনপি “বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি” হিসেবে বিবেচনা করছে। তারেক রহমানের মতে, নারী ও শিশুদের যত্নই ভবিষ্যতের অগ্রগতির মজবুত ভিত্তি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ