কাক কি সত্যিই মনে রাখে আমাদের মুখ!

কাক কি সত্যিই মনে রাখে আমাদের মুখ!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শহর, গ্রাম, পার্ক- যেখানে খুঁজে পাবেন কাক, সেখানে চমকও লুকিয়ে থাকে। মনে করবেন ছোট একটি পাখি কেবলই হয়তো খাবার খুঁজছে! কিন্তু, বাস্তবে কাকের স্মৃতি ও বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে কম নয়। বিশেষ করে মানুষের মুখ চিনে রাখার ক্ষমতা বিজ্ঞানীদেরও হতবাক করেছে। যারা বিশ্বাস করেন, পাখি শুধুই প্রাকৃতিক সহজাত প্রবৃত্তিই অনুসরণ করে, তারা কাকের এই ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে যাবেন!

কাকের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যপ্রণালী-

কাকের মস্তিষ্কে রয়েছে নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় অত্যন্ত জটিল।

⇨ প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স: সমস্যা সমাধান, সামাজিক যোগাযোগ ও স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে।

⇨ হিপোক্যাম্পাস অনুরূপ অংশ: দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি সংরক্ষণ করে।

⇨ নিউরনাল সংযোগের ঘনত্ব: চেহারা এবং অভিজ্ঞতা স্মরণে সহায়তা করে।
 

গবেষকরা দেখিয়েছেন, কাক একবার মুখ চিনে নিলে তা কয়েক বছর মনে রাখতে পারে, এমনকি শত্রু বা বন্ধু মানুষের মুখে তাদের আচরণও মনে থাকে।
 

মানুষের মুখ চিনে রাখার কারণ-

কাক সামাজিক প্রাণী। এদের জীবনযাত্রায় মানুষের উপস্থিতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

⇨ শত্রু ও বন্ধু চেনা: যারা হুমকি দেয়, তাদের মুখ মনে রাখে; যারা খাবার বা সহায়তা দেয়, তাদেরও।

⇨ সামাজিক শিক্ষা: শত্রু বা বন্ধুদের মুখ নতুন কাকে শেখানো যায়, অর্থাৎ প্রজন্মান্তরে তথ্য প্রেরণ সম্ভব।

⇨ প্রতিরক্ষা কৌশল: শত্রু মনে রাখলে বিপদ এড়ানো যায় এবং খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
 

গবেষকরা এটিকে "সামাজিক স্মৃতি" বলে অভিহিত করেছেন, যা কাককে তাদের পরিবেশের সাথে অভিযোজন করতে সাহায্য করে।
 

প্রমাণ ও গবেষণা-

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায়, কাককে নির্দিষ্ট মানুষের মুখ দেখানো হয়েছে।পরবর্তীতে সেই মানুষ এলেই কাক সতর্ক সংকেত দেয়, এমনকি চিৎকার বা আক্রমণও করতে পারে। কাক শুধু মুখ নয়, মানুষের চলন, পেশী ভঙ্গি এবং পোশাকের ধরনও মনে রাখে।

জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার কাক গবেষণায় দেখা গেছে, কাক জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারে। যেমন, যন্ত্র বা সরঞ্জাম ব্যবহার করে খাদ্য বের করা!তারা মানব আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।এছাড়া, কাক তাদের শত্রু ও বন্ধুদের মুখ নতুন কাককে শিখাতে পারে। এটি দেখায় কাকের মধ্যে সামাজিক শিক্ষা ও স্মৃতিশক্তির যুগল বুদ্ধিমত্তা বিদ্যমান।

 

অন্যান্য বুদ্ধিমত্তার দিক-

⇨ অবজেক্ট ব্যবহার: কাক সরল সমস্যা সমাধানের জন্য যন্ত্র, পাথর বা কুড়াল ব্যবহার করতে পারে।

⇨ পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ: কাক মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করে অভিযোজন করে।

⇨ সাংবাদিক বা রিকনেসাঁস ক্ষমতা: কাক পরিবেশের নিত্য পরিবর্তন মনে রাখে এবং খাদ্য বা নিরাপত্তার সুবিধা নেয়।
 

বেঁচে থাকার কৌশল ও অভিযোজন-

কাকের মুখ চিনে রাখার ক্ষমতা কেবল মজা বা সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি বেঁচে থাকার কৌশল।

⇨ শত্রু মানুষের মুখ চিনে রাখা: বিপদ এড়ানো, নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া।

⇨ বন্ধু মানুষের মুখ চিনে রাখা: খাদ্য, নিরাপত্তা ও সুবিধা পাওয়া।

⇨ প্রজন্মান্তরে স্মৃতি স্থানান্তর: কাক তাদের সন্তান বা বন্ধুদের শত্রু/বন্ধু মানুষ চিনতে শেখায়।
 

এটি প্রমাণ করে যে কাক সামাজিক বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তিতে বিশেষভাবে উন্নত, যা সাধারণ পাখির তুলনায় অনেক উচ্চ।

 

কাকের নিউরনাল প্লাস্টিসিটি তাদের নতুন তথ্য শিখতে এবং পুরাতন তথ্য মনে রাখতে সক্ষম করে। গবেষকরা এটিকে কাকের 'মানব-সমাজ মিলিত বুদ্ধিমত্তা' বলেও অভিহিত করেছেন। কাক শুধু সাধারণ পাখি নয়; এটি স্মৃতি, সামাজিক বুদ্ধিমত্তা এবং পরিবেশে অভিযোজনের এক অনন্য উদাহরণ। মানুষের মুখ চিনে রাখা কাকের বেঁচে থাকার কৌশল এবং সামাজিক শিক্ষা প্রদানের দক্ষতার অংশ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ