নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী জাতীয় পার্টি
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় এসেছে জাতীয় পার্টি। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলটি এবার এককভাবে নয়, বরং জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দলটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়েও তারা উন্মুক্ত মনোভাব পোষণ করছেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এককভাবে নয়, বরং জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দিকেই তাদের বেশি আগ্রহ। তার ভাষায়, “জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি যে দলের সঙ্গে জোট হবে তাদেরও আসন ও ভোট বাড়বে।” তিনি আরও বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্পষ্ট হলে জোটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবে জাতীয় পার্টি।
দলটির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা তফসিল ঘোষণার পর কেটে যাবে। এরই মধ্যে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই প্রার্থী বাছাই ও প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। পাটোয়ারী জানান, “আমাদের ছক করা আছে কোন আসন থেকে কে প্রার্থী হতে পারেন। প্রার্থী ঘোষণা করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না।”
তবে সব আসনে প্রার্থী না দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। দলটি চায় রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল হলে জোটবদ্ধভাবে সীমিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। জাতীয় পার্টির এই অবস্থানকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে।
অন্যদিকে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৯ আগস্ট জাতীয় পার্টির একটি অংশ কাউন্সিল করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এবং নিজেদেরকে ‘মূল জাতীয় পার্টি’ দাবি করে নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্য জমা দেয়। এই অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, তারা আইনি প্রক্রিয়া মেনে কাজ করেছেন এবং ‘লাঙল’ প্রতীক নিজেদের কাছে রাখার দাবি করেছেন।
অপরদিকে, জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন অংশ বলছে, দলের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ এখনো তাদের হাতেই রয়েছে। মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আইন অনুযায়ী বর্তমান দলীয় কোন্দল একটি বড় সংকট। তবে পার্টির নিয়ন্ত্রণ এখনো জি এম কাদেরের কাছেই।”
নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, “জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সমস্যা তারা ফয়সালা না করলে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।” এ অবস্থায় জাতীয় পার্টিকে আসন্ন রাজনৈতিক সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি-না, সে বিষয়েও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি।
রাজনৈতিক ময়দানে জাতীয় পার্টি বর্তমানে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ মাসে দলটির কোনো বড় রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখা যায়নি। এমনকি পুলিশি বাধায় একাধিক সভা-সমাবেশও বাতিল হয়েছে। সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর ঢাকায় নির্বাচনী সমাবেশ আয়োজনের উদ্যোগও ব্যর্থ হয়।
তবুও দলটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নেতারা বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে অংশগ্রহণের সুযোগ মিলবে। তারা বলছেন, “রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।” এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হচ্ছে জাতীয় পার্টির কৌশলগত অবস্থান, পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে যে কোনো বড় দলের সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ বা আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে জাতীয় পার্টির। কখনো বিরোধী দলে, কখনো সরকারে থেকেও বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে তারা। এবারের নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা সেই রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে তফসিল ঘোষণার পর দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।