Feijoa: অজানা এক ফল, যা একসাথে দেয় সুগন্ধ, স্বাদ আর ভিটামিনের ধনভান্ডার!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে অনেক ফলের নামই হয়তো আমাদের কানে পরিচিত নয়, কিন্তু তাদের পুষ্টিগুণ ও ঘ্রাণে লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির এক অনন্য বিস্ময়। ঠিক তেমনই এক অচেনা অথচ অসাধারণ ফল হলো Feijoa, যাকে অনেকে বলেন পাইনঅ্যাপল গুয়াভা (Pineapple Guava)। সবুজ রঙের ছোট এই ডিম্বাকৃতির ফলটির গায়ে আছে মিষ্টি-টক গন্ধ, স্বাদে যেন আনারস, পেয়ারা আর স্ট্রবেরির মিশেল।
Feijoa-এর বৈজ্ঞানিক নাম Acca sellowiana। এটি দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পাহাড়ি অঞ্চলে জন্ম নেয়, পরে ছড়িয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়ায়।এই ফল মূলত উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ুতে ভালো জন্মে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে এটি জাতীয়ভাবে জনপ্রিয় একটি ফল। যখন রাস্তা ভরে যায় এই মিষ্টি সুবাসে তখন প্রতিবছর সেখানে "Feijoa Season" পালিত হয় ।
Feijoa আকারে ছোট ডিমের মতো, বাইরের খোসা হালকা সবুজ ও খসখসে। ভেতরের অংশে স্বচ্ছ জেলির মতো নরম মাংসল অংশ থাকে, যা খেতে মিষ্টি-টক ও ঘ্রাণযুক্ত। এই গন্ধের মূল উৎস হলো এর ভেতরে থাকা methyl benzoate, ethyl butyrate ও limonene নামের প্রাকৃতিক অ্যারোমাটিক যৌগ, যেগুলোই ফলটিকে পাইনঅ্যাপল ও পেয়ারা-সদৃশ ঘ্রাণ দেয়।
Feijoa শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম ফল থেকে পাওয়া যায়-
◑ ভিটামিন C: প্রায় ৩২ মিগ্রা, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।
◑ ফাইবার: হজমশক্তি উন্নত করে ও রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
◑ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল যৌগ কোষের ক্ষয়রোধ করে।
◑ ফোলেট ও আয়রন: রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী।
◑ আয়োডিন: Feijoa-এর অন্যতম বিশেষ উপাদান। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে, যা শরীরের হরমোন ভারসাম্যের জন্য অপরিহার্য।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:উচ্চ ভিটামিন C শরীরে ইমিউন সেল সক্রিয় করে ভাইরাস ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
২. হজমের উন্নতি: Feijoa-এর দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য বজায় রাখে, যা হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৩. ত্বক ও বার্ধক্য প্রতিরোধে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে, ফলে ত্বক থাকে সতেজ ও তারুণ্যময়।
৪. মানসিক প্রশান্তি ও স্নায়ু স্বাস্থ্য: Feijoa-তে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন B6 স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে, স্ট্রেস হরমোন কমায় এবং মুড উন্নত করে।
৫. রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এর পটাশিয়াম উপাদান শরীরের সোডিয়ামের ভারসাম্য ঠিক রাখে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এই গাছের ফুলও এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। গোলাপি-সাদা রঙের ফুলের পাপড়ি খাওয়া যায় এবং এতে থাকে হালকা মিষ্টি স্বাদ। দক্ষিণ আমেরিকার লোকজ সংস্কৃতিতে ফুলটি "স্ন্যাক ফ্লাওয়ার" নামে পরিচিত, যা সরাসরি সালাদে যোগ করা হয়।
আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, Feijoa-এর নির্যাসে থাকা phenolic compound ও flavonoid glycosides অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব রাখে। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, নিয়মিত Feijoa গ্রহণ কোষের DNA ক্ষয়রোধে ভূমিকা রাখে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
খাওয়ার উপায় :
Feijoa সরাসরি ফল হিসেবে খাওয়া যায়। এছাড়া এটি দিয়ে তৈরি হয় জুস, জ্যাম, স্মুদি, দই, এমনকি আইসক্রিমও। নিউজিল্যান্ডে "Feijoa Wine" ও "Feijoa Chutney" বেশ জনপ্রিয়।খেতে চাইলে ফলটি মাঝখান থেকে কেটে চামচ দিয়ে ভেতরের নরম অংশ বের করে নেওয়া হয়, এটাই সবচেয়ে ঘ্রাণযুক্ত ও সুস্বাদু অংশ।
Feijoa প্রকৃতির এক ঘ্রাণময় উপহার, যার প্রতিটি কামড়ে মিশে থাকে টক-মিষ্টি স্বাদ, স্বাস্থ্যগুণ ও বৈজ্ঞানিক পুষ্টি।এটি শুধু বিদেশি ফল নয়, বরং একটি "সুপারফ্রুট" যা ইমিউন সিস্টেম থেকে শুরু করে মানসিক প্রশান্তি, সবকিছুর যত্ন নেয় নিঃশব্দে।একটি ছোট সবুজ ফল, কিন্তু এর ভিতরে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির সেরা সুগন্ধ আর ভিটামিনের শক্তি, সেটাই Feijoa-এর আসল জাদু।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।