সমুদ্রের গভীরে জ্বালানির খোঁজ: সময় এখনই!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দেশের জ্বালানি সংকট ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। চাহিদা ও জোগানের বিশাল পার্থক্যের ফলে শীত মৌসুমে গ্যাসের চাহিদা কম থাকলেও শিল্প ও গৃহস্থালিতে সরবরাহ করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের মধ্যে অস্বস্তি ও অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে সার্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার না দিয়ে অতীতে নেওয়া নীতির ফলে দেশ আমদানির ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশে দৈনিক ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ নেমে এসেছে ২০০ কোটি ঘনফুটের নিচে। এ সংকট নিরসনে সরকার এবার রেকর্ড পরিমাণ এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ নতুন করে ৩১টি গ্যাসকূপ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই পুরোনো কূপগুলোর আধুনিকায়ন এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে সাতটি কূপ সংস্কার শেষ হওয়ায় জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই উদ্যোগের কার্যকারিতার প্রমাণ।
জ্বালানি সংকটের দায় বিগত সরকারের নীতির কারণেও বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে আমদানি নির্ভর করে তোলার পাশাপাশি একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও প্রাথমিক জ্বালানির উৎস নিশ্চিত করা হয়নি। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা বর্তমান সরকারকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করাই এখন সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। পুরোনো কূপ সংস্কারের পাশাপাশি নতুন কূপ খননের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সরকার ১০০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। এখানে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সক্ষমতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর প্রয়োজন, কারণ গ্যাস অনুসন্ধানে তাদের সফলতার হার বিদেশি কোম্পানিগুলোর চেয়ে বেশি।
দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এখনই সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। বঙ্গোপসাগরের গভীর ও অগভীর অংশে মোট ২৬টি ব্লক থাকলেও এক দশক পার হয়ে গেলেও কার্যকর অনুসন্ধান শুরু হয়নি। সম্প্রতি সরকার গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করলেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দরপত্র জমা দেয়নি। কেন তারা এতে আগ্রহ দেখায়নি, তা বিশ্লেষণ করে নতুনভাবে দরপত্র আহ্বান করা প্রয়োজন।
দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে একটি সুসংগঠিত ও গতিশীল জ্বালানি নীতি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে দেশীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে জ্বালানি নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।