সৌদি আরবের সামনে নেতৃত্বের সুবর্ণ সুযোগ :আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ভূমিকা

সৌদি আরবের সামনে নেতৃত্বের সুবর্ণ সুযোগ :আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ভূমিকা
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা সৌদি আরবের জন্য আঞ্চলিক নেতৃত্ব দেওয়ার একটি অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়োজনীয়তা এখন আর তেমন জোরালো নেই, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী লবিগুলোর আগের যুক্তিগুলো এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

সৌদি আরব সম্প্রতি গাজা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, যা আরব বিশ্বে দেশটির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ সত্ত্বেও সৌদি আরব আরব ঐক্য ও ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের নেতৃত্বের ভিত্তি মজবুত করতে পারে।

সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের প্রভাব হ্রাসের ফলে সৌদি আরবের জন্য একটি নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল, যা সৌদি আরবকে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় নিয়ে যেতে পারে। ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ায় সৌদি আরব এখন আরব বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

২০২২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগকে সামনে রেখে সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি সংকটের সমাধানে জোরালো ভূমিকা রাখে, তবে তা আরব বিশ্বে দেশটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া আঞ্চলিক নেতৃত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইতিহাসে দেখা গেছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমর্থন আরব নেতাদের জন্য বৈধতা ও জনসমর্থন অর্জনের একটি প্রধান উপায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সৌদি আরবকে সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো, বিশেষ করে গাজা সংকট নিয়ে তার বিতর্কিত বক্তব্য, আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও ট্রাম্পের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সৌদি আরব যদি যুক্তরাষ্ট্রের চাপে না গিয়ে স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি চালায়, তবে তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও সৌদি আরবের জন্য একটি বিবেচনার বিষয়। বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের উত্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাসের এই সময়ে সৌদি আরবকে কৌশলগতভাবে চলতে হবে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা সৌদি আরবের জন্য একটি বুদ্ধিদীপ্ত কূটনৈতিক পদক্ষেপ হতে পারে।

সৌদি আরবের সামনে এখন একটি ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে। আঞ্চলিক নেতৃত্বের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশটি যদি ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নেয় এবং আরব বিশ্বের ঐক্য গড়ে তোলে, তবে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। এই পথে এগোলে সৌদি আরব শুধু আঞ্চলিক নেতৃত্বই দেবে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

 

খালিদ আল-হারব কাতারের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির লিবারেল আর্টস অনুষদের অধ্যাপক

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত


সম্পর্কিত নিউজ