জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে আসছে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মেলিসা

জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে আসছে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মেলিসা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বের চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় ‘হারিকেন মেলিসা’-এর আঘাতের অপেক্ষায় জ্যামাইকা। ইতোমধ্যে দ্বীপটিতে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং মার্কিন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এটি হতে পারে জ্যামাইকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। ঘণ্টায় ১৭৫ মাইল (প্রায় ২৮২ কিলোমিটার) বেগে বয়ে যাওয়া এই ঝড় বর্তমানে ক্যাটাগরি–৫ পর্যায়ে রয়েছে, যা সর্বোচ্চ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত।

মার্কিন জাতীয় হারিকেন কেন্দ্রের (এনএইচসি) সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, মেলিসা বর্তমানে রাজধানী কিংস্টন থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে উত্তর–উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঝড়ের গতি ঘণ্টায় মাত্র ২ মাইল হওয়ায় এতে দীর্ঘমেয়াদি ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রাণঘাতী ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এনএইচসি জানিয়েছে, জ্যামাইকার উঁচু এলাকাগুলোতে বাতাসের বেগ আরও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বরাবর সম্পূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের সম্ভাবনা রয়েছে।

জ্যামাইকার স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় সোমবার সন্ধ্যায় তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এর আগে হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এনএইচসি–এর উপপরিচালক জেমি রোমে বলেন, “মেলিসার ধীরগতি ও অতি ভারী বর্ষণ একত্রে জ্যামাইকার জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।” সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে আগামী চার দিনে কিছু এলাকায় ৪০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।

সরকার ইতোমধ্যে রাজধানী কিংস্টনসহ নিম্নাঞ্চলগুলোতে বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, “প্রত্যেক জ্যামাইকানকে অনুরোধ করছি ঘরে থাকুন, সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন এবং জীবন রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিন। আমরা এই ঝড় মোকাবিলা করব এবং আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে আসব।”

শিক্ষামন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন বিবিসিকে বলেন, “আমরা অক্টোবর জুড়ে ভারী বৃষ্টি পেয়েছি, ফলে মাটি ইতিমধ্যেই স্যাচুরেটেড। এবার এত বৃষ্টি মানে ব্যাপক বন্যা ও পাহাড়ি ভূমিধস।” তিনি জানান, দেশজুড়ে ৮৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে এবং সবগুলো বিনামূল্যে খোলা রাখা হয়েছে।

প্রবল ঝড়ের কারণে মার্কিন নৌ–বিজ্ঞান সংস্থার হারিকেন হান্টার বিমানটি তথ্য সংগ্রহের মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষত দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের নিম্নভূমিতে বসবাসকারীদের মধ্যে। অনেকেই লুটপাটের আশঙ্কায় ঘর ছাড়তে অনিচ্ছুক বলে জানিয়েছেন।

জ্যামাইকার পাহাড়ি শহর হ্যাগলি গ্যাপের শিক্ষক ড্যামিয়ান অ্যান্ডারসন রয়টার্সকে জানান, “রাস্তা বন্ধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, আমরা ভীত।” এদিকে সরকারি বাসের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এনএইচসি পরিচালক মাইকেল ব্রেনান বলেন, “কেউ যেন ঘূর্ণিঝড়ের চোখ পেরোনোর সময় বাইরে না যায়। ঘরে থাকাই একমাত্র নিরাপদ উপায়।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “এই অঞ্চলটির কোনো অবকাঠামোই ক্যাটাগরি–৫ ঝড়ের পূর্ণ শক্তি সহ্য করার মতো নয়।”

ঝড়টি মঙ্গলবার রাতে কিউবায় এবং বুধবার বাহামা ও তুর্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপপুঞ্জে প্রভাব ফেলতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, জ্যামাইকার জন্য এটি ১৮৫১ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ