বয়সের ছাপ কমানো এখন সহজ! টক তেঁতুল পানির জাদুকরী উপায় জেনে নিন
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
তেঁতুল,নাম শুনলেই জিভে জল আসে, টক স্বাদের সঙ্গে স্মৃতিও জেগে ওঠে। কিন্তু জানেন কি, এই সাধারণ গাছের ফলই এখন বিজ্ঞানের চোখে এক "প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং টনিক"! সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তেঁতুল পানি শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, বরং ভেতর থেকে শরীরকে নবীন রাখে, ত্বকের বয়সের ছাপ কমায় এবং হজম থেকে শুরু করে হৃদ্যন্ত্র,সবকিছুর যত্ন নেয় বৈজ্ঞানিকভাবে।
তেঁতুলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনল, এবং ভিটামিন সি থাকে, যেগুলো শরীরে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল বা ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ অণুকে নিষ্ক্রিয় করে। এই ফ্রি র্যাডিকেলই মূলত কোষের ক্ষয় ঘটায়, যার ফলে ত্বকে বলিরেখা, দাগ এবং বয়সের ছাপ দেখা দেয়।অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো এই প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়, ফলে কোষ নবজীবন পায় এবং কোলাজেন উৎপাদন বেড়ে যায়। এই কোলাজেনই ত্বককে রাখে টানটান, উজ্জ্বল ও স্থিতিস্থাপক, যা অনেকটা তরুণ বয়সের ত্বকের মতো।
ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন সি ও টারটারিক অ্যাসিড তেঁতুলের দুই প্রধান উপাদান, ত্বকের মৃত কোষ ঝরাতে সাহায্য করে। এতে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, নতুন কোষ তৈরি হয়, আর ত্বক হয়ে ওঠে স্বচ্ছ ও মসৃণ।যারা নিয়মিত তেঁতুল পানি পান করেন, তাদের ত্বকে প্রাকৃতিক গ্লো দেখা যায়, যা কৃত্রিম স্কিনকেয়ার পণ্যে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, তেঁতুলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের প্রদাহ, ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও অয়েলি স্কিনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের ছিদ্র পরিস্কার রাখে এবং প্রদাহজনিত লালচে ভাব হ্রাস করে।
তেঁতুলের অন্যতম শক্তি এর ডিটক্সিফায়িং বা দেহ পরিষ্কার করার ক্ষমতা।তেঁতুলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো লিভারের টক্সিন কমায়, এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ও ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান বের করে দেয়।ফলস্বরূপ, রক্ত হয় পরিষ্কার, এবং ত্বকেও সেই প্রভাব পড়ে-দাগ কমে, মুখ হয় আরও উজ্জ্বল।বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন, শরীর যখন টক্সিনমুক্ত থাকে, তখন কোষগুলো অক্সিজেন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে।
এই অক্সিজেন প্রবাহই শরীরে শক্তি জোগায় এবং ত্বককে দেয় প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।
তেঁতুল প্রাকৃতিকভাবে হজম এনজাইম সক্রিয় করে। এটি পাকস্থলীর এসিডের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ সহজ করে। ফলে হজম ভালো থাকে, গ্যাস বা অম্লতা কমে, এবং শরীর অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না।এ কারণে তেঁতুল পানি অনেক সময় ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হিসেবে ধরা হয়।এছাড়া এতে থাকা পটাশিয়াম ও ফ্ল্যাভোনয়েডস রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।এভাবে নিয়মিত তেঁতুল পানি পান করলে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ফ্যাটি লিভার–এর ঝুঁকি কমে যায় বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
তেঁতুল পানি তৈরির সহজ পদ্ধতি-
বাড়িতেই খুব সহজে বানানো যায় এই প্রাকৃতিক পানীয়
এক মুঠো তেঁতুল পরিষ্কার গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ১৫–২০ মিনিট। নরম হয়ে গেলে হাত দিয়ে কচলে রস বের করুন।ছেঁকে নিয়ে এতে সামান্য বিট লবণ মেশান।ইচ্ছা করলে চিনি না দিয়ে অল্প গুড় বা মধু মেশাতে পারেন।
সকালে এক গ্লাস বা বিকেলে আরেক গ্লাস তেঁতুল পানি যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে হজমে অস্বস্তি হতে পারে।
সতর্কতা
তেঁতুল প্রাকৃতিকভাবে অম্লীয়। তাই যাদের পাকস্থলীর আলসার, অ্যাসিডিটি বা অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা পরিমিত পরিমাণে খাবেন।
এছাড়া যারা রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ করেন, তারা তেঁতুল পানি নিয়মিত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।কারণ, তেঁতুল কিছু ওষুধের শোষণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।
তেঁতুল শুধু রান্নার টক উপাদান নয়। এটি এক প্রাকৃতিক "অ্যান্টি-এজিং টনিক", যা ভেতর থেকে শরীরকে রাখে তরুণ ও ভারসাম্যপূর্ণ। বয়স যতই বাড়ুক, শরীরের যত্নের শুরুটা হতে পারে এক গ্লাস তেঁতুল পানি থেকেই, যা একদিকে শরীর পরিষ্কার রাখে, অন্যদিকে ত্বকে ফিরিয়ে আনে প্রাকৃতিক তারুণ্য ও উজ্জ্বলতা।বিজ্ঞানের ভাষায়, তেঁতুল শুধু ফল নয়,এ এক প্রাকৃতিক স্কিন থেরাপি, শরীরের ভিতর থেকে শুরু হয় যার কার্যকারিতা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।