যে স্মৃতি আসলে কখনো ঘটেনি কিন্তু মনে আছে স্পষ্ট! জানেন কি এই ভ্রম কেমন করে তৈরি হয়?
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের মস্তিষ্ক অত্যন্ত জটিল। এটি শুধু তথ্য সংরক্ষণ করে না, বরং সেই তথ্যকে প্রক্রিয়াকরণ, সংযোজন ও পুনঃস্মরণও করে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের স্মৃতি আমাদের সঙ্গে "প্রতারণা" করে।কিছু ঘটনা আমরা ভুল মনে করি, কেউ কেউ নাম, স্থান বা ঘটনার ক্রম ভুলভাবে মনে রাখে। বৈজ্ঞানিকভাবে এ ধরনের সমস্যা "স্মৃতিভ্রংশ" বা memory distortion নামে পরিচিত।
স্মৃতিভ্রংশের মূল কারণ নিউরোনাল নেটওয়ার্কের পরিবর্তন। স্মৃতি মূলত মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স-এ সংরক্ষিত হয়। নতুন তথ্য সংরক্ষণ বা পুরনো তথ্য পুনঃস্মরণের সময় নিউরনের সংযোগ কিছুটা পরিবর্তিত হয়।ফলে ঘটনার সংক্ষিপ্ত অংশ বা বিশদ ভুলভাবে পুনরায় তৈরি হতে পারে।
⇨ মানসিক প্রভাব ও সংবেদনশীলতা:
আমাদের অনুভূতি বা মানসিক অবস্থা স্মৃতিকে প্রভাবিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, ভয়, উদ্বেগ বা চাপের সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা আমরা অতিরঞ্জিত বা ভুলভাবে মনে রাখি।
⇨ বাহ্যিক প্রভাব ও তথ্য সংযোগ:
যখন আমরা একটি ঘটনা স্মরণ করি, তখন পারিপার্শ্বিক তথ্য বা অন্য মানুষের বক্তব্যও সেই স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এটাকে "misinformation effect" বলে থাকেন। সহজ কথায়, আমরা বাইরের ভুল তথ্যও সত্য মনে করি।
⇨ সময় ও ভুল পুনঃস্মরণ:
স্মৃতির "ফিক্সেশন" চিরস্থায়ী নয়।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুনঃস্মরণের সময় কিছু অংশ বাদ যায় বা অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভুল তথ্য তৈরি করে।
স্মৃতিভ্রংশের ধরন:
১. মিসিনফর্মেশন ইফেক্ট (Misinformation Effect): অন্যের কথার প্রভাবে বা ভুল সংবাদ শুনে আমরা ঘটনার সত্যিকে ভুলভাবে মনে করি।
উদাহরণ: একটি দুর্ঘটনার বিবরণ পড়ে আমরা ভুল মনে করি যে ঘটনাস্থলে কোন গাছ ছিল।
২. ফ্যামিলিয়ারিটি ইফেক্ট (Familiarity Effect): কোনো ঘটনা বা ব্যক্তি আমাদের পরিচিত মনে হওয়ায় আমরা ভুল করে তার সঠিক ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলি।
৩. ক্রিপটোম্নেসিয়া (Cryptomnesia): আমরা মনে করি যে একটি তথ্য বা আইডিয়া আমাদের নিজস্ব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা এটি আগে অন্য কোথাও শুনেছি।
মস্তিষ্কের কৌশল স্মৃতিভ্রংশ তৈরিতে
⇨ সংকেতের দুর্বলতা: কিছু স্মৃতি মস্তিষ্কে "partially encoded" হয়। পুনঃস্মরণের সময় মস্তিষ্ক নিজের অনুমান যোগ করে।
⇨ রূপান্তরের প্রক্রিয়া: স্মৃতি সংরক্ষণের সময় তা সবসময়ই বিশ্লেষণ এবং সংযোজনের মধ্য দিয়ে যায়, তাই কিছু অংশ বিকৃত হয়।
⇨ সামাজিক ও মানসিক চাপ: অন্যদের প্রত্যাশা বা সামাজিক প্রভাব স্মৃতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
লফটাস দেখিয়েছেন যে, লোকেদের মনে ধরিয়ে দেওয়া ভুল তথ্যের কারণে তারা এমন ঘটনা মনে করতে পারে যা কখনো ঘটেনি। আবার, MRI-এ দেখা গেছে, ভুল স্মৃতি সৃষ্টি হলে হিপোক্যাম্পাস এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স একসাথে সক্রিয় হয়।
স্মৃতিভ্রংশ বা memory distortion মানেই মস্তিষ্কের ত্রুটি নয়; এটি মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াকরণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্ক তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও পুনঃস্মরণের মাধ্যমে ঘটনাকে অর্থপূর্ণ রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কখনো কখনো বাইরের প্রভাব, সময়ের ক্ষয় বা মানসিক চাপের কারণে তথ্য বিকৃত হয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।