ভয়কে জয় করে আত্মবিশ্বাসের পথে-'The King's Speech' থেকে শিখুন জীবনের পাঠ!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রাজা হয়েও তিনি কথা বলতে ভয় পেতেন। মঞ্চে দাঁড়ালে জড়তা গ্রাস করত, বাক্য থেমে যেত মাঝপথে। অথচ সেই মানুষই পরবর্তীতে ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাষণ দেন। যুদ্ধের সময় এক জাতিকে একত্রিত করেন কেবল নিজের কণ্ঠের শক্তিতে। এই বাস্তব কাহিনিই তুলে ধরা হয়েছে ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "The King's Speech" চলচ্চিত্রে, যেখানে রাজা ষষ্ঠ জর্জের কণ্ঠ নয়, তার মানসিক শক্তির পুনর্জাগরণের গল্প বলা হয়েছে নিপুণভাবে।
চলচ্চিত্রটি ব্রিটেনের রাজা ষষ্ঠ জর্জ (King George VI)-এর সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। শৈশব থেকেই তিনি তোতলামির (stammering) সমস্যায় ভুগছিলেন। রাজপরিবারের সদস্য হয়েও তাঁর সবচেয়ে বড় বাধা ছিল নিজের উচ্চারণ, নিজের ভয়।কিন্তু রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের ভার নেওয়ার পর, তাঁকে শুধু রাজা নয়, একজন অভিভাবক ও অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল সময়ে দেশের মানুষ তাঁর কণ্ঠে সাহস খুঁজে পেতে চেয়েছিল। আর তখনই শুরু হয় তাঁর নিজের ভেতরের ভয়, অনিশ্চয়তা ও আত্ম-সন্দেহের বিরুদ্ধে নিজের সঙ্গে লড়াই ।
চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাজা জর্জ ও তাঁর স্পিচ থেরাপিস্ট লায়োনেল লগ-এর মধ্যে। লগ কোনো চিকিৎসক নন, কিন্তু মানুষের ভয় ও মনস্তত্ত্ব বুঝতে জানেন গভীরভাবে। তিনি রাজাকে বলেন"আপনি কেবল আপনার কণ্ঠ নয়, আপনার ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।"এই সম্পর্কটি ধীরে ধীরে এক শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। লগ-এর অনুশীলনের মধ্যে ছিল শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, বাক্য উচ্চারণের তাল, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে পাওয়া।চলচ্চিত্রটি দেখায়, তোতলামি কেবল ভাষাগত সমস্যা নয়; এটি গভীরভাবে মনস্তাত্ত্বিক ও আত্মসম্মানের সঙ্গে যুক্ত। যতক্ষণ না মানুষ নিজের ভেতরের ভয়কে স্বীকার করে, সে ভয় কাটানো সম্ভব নয়।
"The King's Speech" শুধু একটি ঐতিহাসিক বা জীবনীমূলক ছবি নয়, এটি এক মনস্তাত্ত্বিক যাত্রা।এখানে শেখানো হয়েছে, আত্মবিশ্বাস আসে না বাহ্যিক সাফল্য থেকে; আসে নিজের দুর্বলতাকে গ্রহণ করার ক্ষমতা থেকে।রাজা জর্জ নিজেই বলেন "I have a voice."এই সংলাপ শুধু একটি বাক্য নয়, এটি এক মানসিক মুক্তির ঘোষণা।
বিজ্ঞান বলছে, ভয় ও উদ্বেগের সময় মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশ অতিসক্রিয় হয়, ফলে কথা বলার সময় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, শ্বাস ছোট হয়, কণ্ঠ কাঁপে। থেরাপিস্টের শেখানো ধীরে শ্বাস নেওয়া ও শরীর শিথিল রাখার অনুশীলন অ্যামিগডালার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ভয় ও তোতলামি কমে আসে,এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকেও প্রমাণিত।
এই চলচ্চিত্রের বার্তা একেবারে স্পষ্ট-ভয়কে অস্বীকার নয়, মুখোমুখি হতে শেখো। রাজা যেমন প্রতিদিনের অনুশীলন, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নিজের ভয়কে পরাজিত করেন, তেমনি বাস্তব জীবনে প্রতিটি মানুষই পারে নিজের 'অন্তরের কণ্ঠ' খুঁজে নিতে।একজন বক্তার মতো নয়, বরং একজন সাধারণ মানুষের মতোই তিনি আমাদের শেখান-প্রস্তুতি ভয়কে কমায়,নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা শক্তির পরিচায়ক,এবং প্রকৃত আত্মবিশ্বাস আসে নিজের কণ্ঠে বিশ্বাস থেকে।
"The King's Speech" সিনেমাটি ভাষণের প্রশিক্ষণ নয়, বরং মানুষের আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠনের পাঠ। এটি প্রমাণ করে, ভয় যত বড়ই হোক না কেন, যদি মন প্রস্তুত থাকে, তবে মস্তিষ্ক তাকে পরাস্ত করতেই পারে। রাজা ষষ্ঠ জর্জের কণ্ঠ তাই কেবল একটি বক্তৃতার প্রতিধ্বনি নয়; এটি মনের দৃঢ়তার প্রতীক, যা আজও শেখায়, আত্মবিশ্বাস মানে ভয় না পাওয়া নয়, ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।