এই কোমল ফুলের পেছনে লুকিয়ে আছে এক বিশাল জাতীয় গল্প-'শাপলা'-র ইতিহাস জানেন?

এই কোমল ফুলের পেছনে লুকিয়ে আছে এক বিশাল জাতীয় গল্প-'শাপলা'-র ইতিহাস জানেন?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শাপলা (Nymphaea nouchali), যে ফুলটি বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে পরিচিত, তা শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। শান্ত নদী, হ্রদ, খাল এবং জলাশয়ে মাথা তুলে থাকা শাপলা আমাদের প্রকৃতির এক অমূল্য অংশ। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শাপলা এসেছে ঐতিহ্য ও প্রতীকী অর্থে। দেশপ্রেম, সুন্দর জীবন ও প্রাকৃতিক সঙ্গতির প্রতীক হিসেবে।

শাপলার জাতীয় ফুল হিসেবে নির্বাচনের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীন দেশের প্রতীক হিসেবে যে ফুলটি জাতীয় প্রতীক হবে, তা নির্বাচন করার সময় শাপলা এর সহজলভ্যতা, সৌন্দর্য ও স্থানীয় পরিচিতি গুরুত্ব পেয়েছিল। শাপলা নদী, খাল ও পুকুরের প্রতিটি জলে অম্লানভাবে ফুটে থাকে, যা স্বাধীনতার পর নতুন রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও চিরস্থায়ী সৌন্দর্যকে প্রতিফলিত করে। শাপলা বাংলাদেশকে একটি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শাপলা মূলত Nymphaea nouchali প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। এটি সমতলে এবং শান্ত জলাশয়ে জন্মায়,যা জলাশয়ের পানির মান ধরে রাখতে সাহায্য করে। এর পাতা সূর্যের আলো শোষণ করে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। শাপলার মধ্যে মাছ, কীটপতঙ্গ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর বাসস্থল। ফলে এটি এক প্রাকৃতিক বায়োডাইভার্সিটি হাব হিসেবে কাজ করে।
শাপলা শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, পরিবেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জলাশয়ের ইকোসিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখে, পানির ক্ষয় রোধ করে এবং জীববৈচিত্র্য ধরে রাখে।

শাপলা বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে একটি বিশেষ স্থান দখল করে।লোকগাথা, কবিতা, চিত্রকলা ও লোককাহিনিতে শাপলার উল্লেখ প্রচুর।দেশের সনাতন ও আধুনিক সংস্কৃতিতে শাপলা সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক।স্বাধীনতা ও জাতীয় পরিচয়ের সাথে শাপলার মিলন, এটিকে দেশের মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে দৃঢ় করেছে। শাপলার নিখুঁত সুন্দরতা ও শান্ত উপস্থিতি মানুষের মনের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়কে প্রাণবন্ত রাখে।

শাপলা শুধু স্থানীয় নয়, এটি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পরিচয়ের একটি চিহ্ন। পর্যটকরা বাংলাদেশের নদী ও হ্রদে ভেসে থাকা শাপলা দেখে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ারের মতো, শাপলা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
 

শাপলা কেবল দৃষ্টিনন্দন নয়, এর কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যবহারও আছে-

শাপলার মূল ও পাতা খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শাপলার যৌগগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রাখে। শাপলার সংরক্ষণ মানে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ নয়, বরং স্থানীয় জৈব সম্পদ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ।

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে এক অনন্য প্রতীক।এটি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এবং পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। শাপলার প্রতিটি পাপড়ি আমাদের দেশের পরিচয়, ইতিহাস এবং মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কের গল্প বলে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ