উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৮ বছর আজ

উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৮ বছর আজ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় সিডরের সেই ভয়াল কালরাত্রি আজ শনিবার। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে ঘণ্টায় প্রায় ২৭০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই প্রবল ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় ১০ জেলায় আঘাত হানে। আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি তুলনামূলক ভালো থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা কিছুটা কমানো সম্ভব হলেও ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা ছিল অসহনীয়।

সরকারি হিসাবে সেদিনের দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা; বেসরকারি হিসেবে যা ২০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। সরকারি হিসাবেই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৯৯ এবং নিখোঁজ ১ হাজার ৭২৬ জন। তবে পরবর্তী সময়ে বহু নিখোঁজের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বজনদের ধারণা।

সিডরের আঘাতে দক্ষিণ উপকূলের প্রায় ৪ লাখ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় এবং আরও প্রায় ১০ লাখ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয় এবং পাঁচ লাখ হেক্টরের ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ছিল ভয়াবহ; প্রায় ৫০ লাখ গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি মারা যায়। সড়ক অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ছিল নজিরবিহীন, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কসহ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। পাশাপাশি প্রায় ৯০ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ১ হাজার ৫০০-র বেশি সেতু ও কালভার্ট সম্পূর্ণ এবং ৯০০-এর বেশি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১ হাজার ৮০০ সরকারী-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আরও সাড়ে ৬ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মোট ৩০টি জেলা সিডরের প্রভাবে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ৭টি জেলার ২০০টির বেশি উপজেলা এবং প্রায় ১ হাজার ৭৫০টি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা সরকারি হিসেবে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার হলেও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। প্রায় এক কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে দুর্যোগের নেতিবাচক প্রভাবে আক্রান্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী ও বনভূমি সেদিন আরও বড় বিপর্যয় থেকে উপকূলকে রক্ষা করেছিল, যদিও বনায়নের প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমির অগণিত গাছ মাটিতে মিশে যায়।

আবহাওয়া অধিদফতর ১১ নভেম্বর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ শনাক্ত করে, যা ১৩ নভেম্বর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বরগুনা-বাগেরহাট উপকূলে আঘাত হানে। প্রায় ১৫–২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত করে। বরিশাল মহানগরী পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব অনুভূত হয়, যেখানে বেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের মতো।

১৬ নভেম্বর সকাল থেকে সেনাবাহিনী, রেড ক্রিসেন্টের ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। আকাশ ও নৌপথে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ চিকিৎসা দল ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে সহায়তা করে। যদিও প্রায় ৪০টি দেশ সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও ৩২টি দেশ তা বাস্তবায়ন করেনি।

এখনো সিডরের সেই রাত উপকূলবাসীর মনে আতঙ্ক হয়ে ফিরে আসে। নভেম্বরে বড় ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা এবং অতীতের অভিজ্ঞতা উপকূলজুড়ে দুর্যোগ সচেতনতার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ