Snake Plant Survival 101: কম যত্নে, কম আলোতেও সুন্দর সবুজ রাখার সহজ পদ্ধতি !

Snake Plant Survival 101: কম যত্নে, কম আলোতেও সুন্দর সবুজ রাখার সহজ পদ্ধতি !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শহরের ব্যস্ত জীবন, দূষিত বাতাস, ঘরের সীমিত আলো এসব মিলিয়ে অনেক ঘরোয়া গাছই টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু স্নেক প্ল্যান্ট (Sansevieria trifasciata) যেন একেবারেই অন্য জগতের বাসিন্দা। চারপাশের প্রতিকূলতাকে অদ্ভুতভাবে সহ্য করার ক্ষমতা আছে তার। সেই কারণে এই গাছ বিশ্বজুড়ে পরিচিত "Kill-Proof Plant" নামে। মানে, যতই অবহেলা হোক, বেঁচে থাকবেই। কিন্তু এই বেঁচে থাকার নেপথ্যে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, যেগুলো না জানলে মানুষ গাছটিকে যতটা সহজ ভাবছে, ততটাই সহজে আবার ভুলও করছে। আর সেখানেই প্রয়োজন একটি স্পষ্ট, বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবভিত্তিক 'Survival Guide'।

এই গাছের পাতা পুরু, মোমের মতো আবরণ রয়েছে। ফলে খুব কম পানি দিয়েও ভেতরে পানি ধরে রাখতে পারে। কম আলোতেও এর ক্লোরোফিল সক্রিয় থাকে, তাই ফটোসিন্থেসিস থেমে যায় না। অন্যদিকে রাতে অক্সিজেন ছাড়ার ক্ষমতা (CAM photosynthesis) থাকার ফলে শোবার ঘরেও সহজে রাখা যায়। এতসব মিলিয়ে গাছটি এমন পরিবেশেও বেঁচে থাকে, যেখানে সাধারণ ইনডোর প্ল্যান্ট বেঁচে থাকতেই কষ্ট পায়।

স্নেক প্ল্যান্ট পানির অভাব সহ্য করতে পারে, কিন্তু পানি জমে থাকা একদম সহ্য করতে পারে না। তাই প্রয়োজন এমন মাটি, যেটি দ্রুত পানি ঝরিয়ে দেয়। বেলে-দোআঁশ মাটির সঙ্গে সামান্য পারলাইট বা বালি মেশানো উপযুক্ত। এ গাছের মূল খুব দ্রুত পচে যায়, তাই ভারী মাটি ব্যবহার করা বিপজ্জনক ভুল। অনেকেই মনে করেন ইনডোর প্ল্যান্ট মানেই নিয়মিত পানি। কিন্তু স্নেক প্ল্যান্টের জন্য অতিরিক্ত পানি একটি মারাত্মক ঝুঁকি। গরমকালে ১০–১৪ দিনে একবার আর শীতে ২০–৩০ দিনে একবারই যথেষ্ট। শিকড় যদি কিছুদিন শুকনো থাকে, তবুও গাছের সমস্যা হয় না। বরং সবসময় ভেজা থাকলে পাতায় বাদামি দাগ, নরম হয়ে যাওয়া বা গোড়া পচে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

স্নেক প্ল্যান্টকে কম আলোতেও রাখা যায়—এটাই এর বৈশিষ্ট্য। কিন্তু গাছটি সুন্দর রঙ বজায় রাখতে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পেতে চাইলে তাকে পরোক্ষ উজ্জ্বল আলো দিন। জানালা থেকে দূরে, ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় রাখলে গাছ বাঁচবে, তবে বাড়বে ধীরগতিতে।

এই গাছের জন্ম উষ্ণ এলাকায়, তাই ১৮°–৩০°C তাপমাত্রা সবচেয়ে উপযোগী। শীতের সময় খুব ঠান্ডা হলে পাতার মাথা কালচে হয়ে যেতে পারে। আবার অতিরিক্ত আর্দ্র জায়গায় রাখলে ছত্রাক জন্মায়। তাই বাথরুমে রাখা অনেকে যেটি করেন, তা সবসময় উপযুক্ত সমাধান নয়।

স্নেক প্ল্যান্টের শেকড় ছড়িয়ে বাড়ে, কিন্তু বিশাল পাত্র এরা পছন্দ করে না। সামান্য ছোট ও ঘন পটে শিকড় ভালোভাবে গাঁথে, এতে গাছ দ্রুত নতুন পাতা দেয়। তবে শিকড় একেবারে পাত্র ভরাট করে ফেললে তখন নতুন পাত্রে স্থানান্তর প্রয়োজন হয়। সেটিও খুব ঘন ঘন নয়, দুই–তিন বছর অন্তর।
 

এই গাছে রোগবালাই খুব কম হলেও কিছু লক্ষণ সতর্ক করে দেয়- 

◑ পাতার গোড়া পচা: অতিরিক্ত পানি

◑ পাতায় নরম দাগ বা গন্ধ: ছত্রাক

◑ পাতার ডগা শুকিয়ে যাওয়া: ঠান্ডা বা শুষ্ক বাতাস

◑ ঘরের বায়ু চলাচল একটু বাড়ালে এবং মাটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে পানি দিলে বেশিরভাগ সমস্যা সহজেই সামলে যায়।

 

কীটপতঙ্গ কম আসে, কিন্তু এলে কী করবেন?

মিলিবাগ বা স্পাইডার মাইট মাঝে মাঝে দেখা যায়। পাতায় হালকা সাদা তুলোর মতো দাগ বা সূক্ষ্ম জাল দেখলে বুঝতে হবে। সাবান পানি দিয়ে তুলোর মতো অংশ মুছলেই সাধারণত সমস্যা কেটে যায়। কোনো কঠিন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না।

এ গাছ মানুষের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি বদলে দেয়। কারণ এটি শেখায়- কম পানি মানে অবহেলা নয়, বরং সঠিক যত্ন। কম আলো মানে অসম্ভব নয়, বরং ভিন্ন ধরনের অভিযোজন। অতিরিক্ত যত্ন না নিলেও এটি নিঃশব্দে বাঁচে। এই গাছ প্রকৃতিকে দেখার দৃষ্টিও বদলে দেয়। শহরের ব্যস্ত মানুষ বুঝতে পারে যে সব জীবের নিজস্ব টিকে থাকার কৌশল আছে, যেটা শেখা যায়, প্রয়োগ করা যায়, আর সবশেষে মানুষকে ধৈর্য ও মিতব্যয়িতা শেখায়।

অনেকেই ভাবে স্নেক প্ল্যান্ট শুধু সৌন্দর্য বাড়ানোর গাছ। কিন্তু সত্য হলো এ গাছ হলো অভিযোজনের এক মডেল। পানি কম পেলেও বাঁচে, সীমিত আলোতেও চলে, শহুরে ধুলাবালিতে টিকে থাকে, এমনকি ব্যস্ত মানুষ ভুলেও গেলে সমস্যা হয় না। এই কারণেই স্নেক প্ল্যান্ট শুধু একটি ইনডোর প্ল্যান্ট নয়, একটি জীবনদর্শন। টিকে থাকার জন্য বেশি কিছু লাগে না। সঠিক পরিবেশ, সামান্য যত্ন আর প্রকৃতির বুদ্ধিমত্তাকে সম্মান দেওয়াই যথেষ্ট। এই গাছটি সেই সত্যটিই প্রতিদিন নীরবে মনে করিয়ে দেয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ