যে ফলটাকে কাঁঠাল ভেবে ভুল করেন সবাই, ডিপ-ফ্রাইড স্ন্যাকসে সেটাই এখন এশিয়ার নতুন ক্রেজ!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে হাঁটলে হঠাৎই বাতাসে ভেসে আসে এক ধরনের গভীর মিষ্টি সুবাস, যা অনেকটা কাঁঠালের মতো, আবার পুরোপুরি কাঁঠাল নয়। গুঁড়ো-মিষ্টি, সামান্য টক, আবার খানিকটা তীব্র, এই অদ্ভুত সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক অনন্য ঘ্রাণ। সেই সুবাসের উৎসই Cempedak এক ফল, যা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার ট্রপিক্যাল অঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে রন্ধন–ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে।
আমাদের দেশে কাঁঠালের জনপ্রিয়তা যেমন তুঙ্গে, ঠিক তেমনই মালয়েশিয়ার মানুষের আবেগ মিশে আছে এই Cempedak–কে কেন্দ্র করে। কাঁঠালের মতো দেখতে হলেও এর ভেতরের কোষগুলো নরম, রসালো এবং বিশেষ ধরনের স্বাদযুক্ত। শুধু ফল হিসেবেই নয়, বরং ডিপ-ফ্রাইড স্ন্যাকস হিসেবে এর জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে আজ এটি রাস্তার খাবার থেকে শুরু করে পরিবারের রান্নাঘর সব জায়গাতেই সমান প্রিয়।
এমন এক ফল, যার কারণে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, কৃষক লাভবান হয়, আর ভোক্তারা পায় এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে Cempedak-এর বৈশিষ্ট্য, পুষ্টিগুণ, রান্নাবান্নায় ব্যবহার, ডিপ-ফ্রাইড সংস্কৃতির উত্থান এবং এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
Cempedak দেখতে অনেকটাই কাঁঠালের মতো - লম্বাটে, কাঁটার মতো প্রোট্রুশন, পুরু খোসা এবং ভেতরে খাচ্ছিল কোষ। তবে যে কারণে দুটি ফল আলাদা হয়ে যায়, তা হলো:
১. টেক্সচার ও গঠন- কাঁঠালের কোষ তুলনামূলক কড়া ও চিবোতে শক্ত লাগে। Cempedak–এর কোষ অধিক নরম, রসালো এবং কেকের মতো সল্টি–সফট।
২. সুগন্ধ- কাঁঠালের গন্ধ মিষ্টি হলেও অপেক্ষাকৃত নিরীহ। Cempedak–এর ঘ্রাণ প্রশস্ত, শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের।
৩. স্বাদ- এতে মধুর মতো মিষ্টি, হালকা কাঁঠালের নোট এবং সামান্য বাদামের স্বাদ থাকে। কোষগুলো রান্না বা ভাজায় ভিন্ন স্বাদ তৈরি করে।
৪. বীজ- বীজ সেদ্ধ বা ভাজা খাওয়া যায় এবং এতে উচ্চ স্টার্চ থাকে, যা আলুর মতো শক্তি দেয়।
৫. উৎপত্তি- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃষ্টিঘন জঙ্গল ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়।
কেন এটি ডিপ-ফ্রাইড স্ন্যাকসের রাজা হয়ে উঠল?
একসময় যে ফল কেবল ফল হিসেবেই খাওয়া হতো, বর্তমানে তা সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস্তার খাবারের একটি। এর তিনটি কারণে:
১. নরম কোষ ভাজার পর হয়ে ওঠে অত্যন্ত ক্রিসপি! Cempedak–এর কোষ নরম হওয়ায় যখন এটি ব্যাটারে ডুবিয়ে গরম তেলে ভাজা হয়, তখন বাইরের অংশে সোনালি খাস্তা স্তর তৈরি হয় এবং ভেতর থাকে মোলায়েম ও গরম। এটাই স্ন্যাক হিসেবে এর জনপ্রিয়তার মূল রহস্য।
২. এটি মিষ্টি–কুমিয়ানি স্বাদের অনন্য মিশ্রণ। ভাজা অবস্থাতেও এর স্বাদ হারায় না। বরং মিষ্টত্ব আরও কিছুটা গাঢ় হয়, যা অনেকের কাছে ডেজার্ট হওয়া সত্ত্বেও স্ন্যাকসের জায়গা দখল করে।
৩. রাস্তার খাবারের সংস্কৃতিতে সহজ প্রস্তুতি! কোষ বের করা, ময়দা/চালের গুঁড়া/পানি মিশিয়ে ব্যাটার তৈরি, ডুবো তেলে ভাজা। এই সাদামাটা প্রক্রিয়াই এটি সাধারণ মানুষের অত্যন্ত চেনা খাবার করে তুলেছে।
এটি শুধু স্বাদই নয়, দেহের জন্যও উপকারী!
যেহেতু Cempedak–এ কাঁঠালের মতো স্টার্চ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তাই নিয়মিত পরিমিত সেবন উপকারী। কিছু প্রধান পুষ্টি উপাদান: ভিটামিন C, ভিটামিন A, পটাশিয়াম, খাদ্যআঁশ, প্রাকৃতিক এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এর উপকারিতা:
◑ পাচন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে
◑ ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে
◑ চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী
◑ শক্তি জোগায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষ–ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এছাড়া এর বীজেও উচ্চমাত্রায় স্টার্চ থাকে, যা কম খরচে শক্তির উৎস হিসেবে স্থানীয় মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ফলকে কেন্দ্র করে ঘরে পরিবারের সবাই জড়ো হয়। অনেক এলাকায় এই ফল ভাজা খেলে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। বাজারে, ছোট দোকানে, মেলায় সব জায়গায় এটি বিক্রি হয়। তার গন্ধ ও রঙ দূর থেকেই মানুষকে আকৃষ্ট করে। যেমন আমাদের দেশে কলাই ভাজা, পেঁয়াজু, বড়া - ঠিক তেমনই সেখানে Cempedak fritters।
Cempedak গাছ-
⇨ কম সারেই জন্মায়
⇨ কীটনাশক কম লাগে
⇨ জৈববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে
⇨ মাটির ক্ষয় রোধে কার্যকর
এই কারণেই অনেক কৃষক এখন এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
যেভাবে এটি খাওয়া হয়?
১. ডিপ-ফ্রাইড স্ন্যাকস: সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি,সোনালি ক্রিসপি চেম্পেডাক।
২. ডেজার্ট: চিনি, নারকেল দুধ, চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পুডিং বা মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়।
৩. স্যুপ বা কারি: কাঁচা Cempedak অনেক এলাকায় তরকারি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
৪. বীজ ভাজা বা সেদ্ধ: স্থানীয়ভাবে এটি আলুর বিকল্প ধরে নেওয়া হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অসংখ্য ফলের মধ্যে Cempedak–এর বিশেষ পরিচয় রয়েছে। এর স্বাদ, গন্ধ, টেক্সচার এবং বহুমুখী ব্যবহারের কারণে। কাঁঠালের আত্মীয় হলেও এটি একেবারে আলাদা চরিত্রের অধিকারী। আর সেই চরিত্রই একে বিশ্বজুড়ে ধীরে ধীরে পরিচিত করছে। রাস্তার দোকানে ব্যাটার ডুবানো সোনালি ভাজা Cempedak–এর সুগন্ধ যেমন মানুষের মন জয় করে, তেমনি এর পুষ্টিগুণ ও টেকসই চাষ ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক দৃষ্টান্ত। Cempedak সমৃদ্ধ করেছে মানুষের স্বাদ–অভিজ্ঞতা, অর্থনীতি এবং রন্ধন–ঐতিহ্য।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।