থাই গ্যাপ নেই? চিন্তা নেই-বডি রিয়েলিটি যা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে!

থাই গ্যাপ নেই? চিন্তা নেই-বডি রিয়েলিটি যা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের প্রায় সব দিকেই প্রভাব ফেলে। ফিডে চোখে পড়ে ফিল্টার করা ছবি, হাই হিল পরা মডেল, এবং পোজ, যেখানে দুই পায়ের মধ্যে সুন্দরভাবে ফাঁকা জায়গা থাকে, যাকে বলা হয় থাই গ্যাপ। তরুণী থেকে কিশোরী, এমনকি অনেক তরুণ পুরুষও হঠাৎ মনে করতে শুরু করে- আমার থাই গ্যাপ নেই, তাহলে আমি কি সুন্দর নই! একটা ছোট ফাঁকা জায়গা কি সত্যিই সৌন্দর্যের মানদণ্ড হতে পারে? উত্তরটা হলো - না। এটি মূলত শরীরের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, যা হাড়ের গঠন, পেশী ঘনত্ব এবং ফ্যাটের বিতরণের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি ছবিই এই সাধারণ বাস্তবতাকে ভুল বোঝায়।

থাই গ্যাপ মূলত নির্ধারিত হয়  Pelvic structure অর্থাৎ কোমর ও কূলহিপের আকৃতি, হাড়ের দৈর্ঘ্য ও অনুপাত, পেশী ও ফ্যাটের প্রাকৃতিক বণ্টন এর মাধ্যমে।  যদি আপনার হাড়ের কাঠামো এমন হয় যা স্বাভাবিকভাবে ফাঁকা জায়গা তৈরি করে, আপনি এটি সহজে পাবেন। কেউ কখনোই এটি পাবেন না। এটি কারও সৌন্দর্য বা ফিটনেসের মানদণ্ড নয়।

উরুর অভ্যন্তরীণ পেশীর টোন এবং ফ্যাটের পরিমাণ থাই গ্যাপের উপস্থিতি প্রভাবিত করে। যাদের উরুতে ফ্যাট কম থাকে এবং পেশী টোনড থাকে, তাদের মধ্যে ফাঁকা জায়গা সহজে দেখা দেয়। কিন্তু শরীরের স্বাস্থ্য বা শক্তি থাই গ্যাপের উপস্থিতি দ্বারা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। শরীরের স্বাস্থ্য বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো—

◑ পেশীর ঘনত্ব ও শক্তি

◑ হজমের স্বাভাবিকতা

◑ হরমোন ভারসাম্য

◑ মানসিক স্থিতিশীলতা
 

এই মানদণ্ডগুলোর সঙ্গে থাই গ্যাপের কোনো সম্পর্ক নেই।
 

মডেল, ইনফ্লুয়েন্সার বা সিনেমার চরিত্রদের ছবি দেখে অনেকে মনে করেন, "আমি অপরিপূর্ণ।" ফলে অকারণ স্বল্প-খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত কার্ডিও বা ব্যায়ামের চাপ, আত্মসম্মান হ্রাস এসব চাপ, বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণ নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অনেকের মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন মানসিক সমস্যাও -

⇨ Eating disorders: অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ বা খাদ্যবর্জন।

⇨ Body dysmorphia: শরীরের ছবি নিয়ে উদ্বেগ Anxiety ও Depression-এর ঝুঁকি।

এসব সমস্যার মূল উৎস অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ এবং থাই গ্যাপের প্রতি অযৌক্তিক আকাঙ্ক্ষা।
 

শরীরকে সুস্থ রাখার বাস্তবপন্থা

১) পেশী শক্ত করুন: হাঁটুর স্থিতিশীলতা ও কোমরের শক্তি বাড়ায়। উরুর অভ্যন্তরীণ পেশী টোনিং করে, কিন্তু থাই গ্যাপের জন্য নয়।

২) সুষম খাদ্যাভ্যাস: প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল সম্পন্ন খাবার হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে।

৩) মানসিক চাপ কমানো: মেডিটেশন, ইয়োগা, দৈনন্দিন ব্যায়াম, শরীরকে ভালোবাসা এবং Body Positivity চর্চা। 

৪) সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব সীমিত করুন। ফিল্টার ও ফটোশপড ছবি বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করে না। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন। 

 

BMI বা ফ্যাট শতাংশের তুলনায় থাই গ্যাপের কোনো গুরুত্ব নেই। পেশীর ঘনত্ব ও শক্তি হল স্বাস্থ্য নির্দেশক। হরমোন ও জিনগত প্রভাব নির্ধারণ করে শরীরের ফ্যাট বিতরণ। শরীরের প্রকৃত স্বাস্থ্য বোঝায় শক্তি, স্থিতিশীলতা, এবং সুস্থ মানসিকতা।
 

 

থাই গ্যাপের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ আজ কিশোরী ও তরুণ নারীদের মধ্যে মেন্টাল হেলথ ইস্যু বাড়াচ্ছে। মানসিক চাপের সঙ্গে জড়িত ডায়েট বা ব্যায়াম প্যাটার্ন কিশোরী দেহে হরমোন ভারসাম্য ভাঙতে পারে। স্বাভাবিক দেহবিন্যাস বোঝার মাধ্যমে এই চাপ কমানো সম্ভব।

থাই গ্যাপ হলো শরীরের স্বাভাবিক বৈচিত্র্য, স্বাস্থ্য বা সৌন্দর্যের মানদণ্ড নয়। প্রকৃত সৌন্দর্য আসে শক্তিশালী পেশী থেকে, স্থিতিশীল মানসিকতা থেকে, ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস থেকে। তাই আপনার শরীরকে ভালোবাসুন, স্বাস্থ্য বজায় রাখুন। থাই গ্যাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। নিজের শক্তি, সুস্থতা এবং আত্মবিশ্বাসের দিকে মন দিন। স্মার্ট ফিটনেস, সচেতন খাদ্যাভ্যাস, মানসিক স্থিতিশীলতা এগুলোই আসল সৌন্দর্য এবং শক্তি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ