জেরুজালেমে ইউএনআরডব্লিউএর দপ্তরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কর্মরত জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA)-এর প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি। দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সরাসরি উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সংস্থাটির কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ভোরে ইসরায়েলি পুলিশ পৌরসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শেখ জারাহ এলাকায় সংস্থার প্রাঙ্গণে জোর করে ঢুকে পড়ে বলে ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন।
অভিযান চলাকালীন ইসরায়েলি বাহিনী কার্যালয় থেকে আসবাবপত্র, তথ্যপ্রযুক্তির সরঞ্জামসহ নানা জিনিসপত্র জব্দ করে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে লাজারিনি উল্লেখ করেছেন যে, ইসরায়েলি বাহিনী কার্যালয়ের জাতিসংঘের পতাকা নামিয়ে সেটির জায়গায় ইসরায়েলের পতাকা তুলে দিয়েছে। লাজারিনি মন্তব্য করেন, এটি কয়েক মাস ধরে ইউএনআরডব্লিউএর ওপর চলা হয়রানির অংশ।
অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনী মোটরসাইকেল, ট্রাক আর ফর্কলিফট ব্যবহার করে এবং পুরো এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়।
ফিলিপ লাজারিনি ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সরাসরি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, "এর মাধ্যমে সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের স্থাপনার নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা রক্ষার যে বাধ্যবাধকতা ইসরায়েলের আছে, তা প্রকাশ্যে উপেক্ষা করা হয়েছে।"
লাজারিনি মনে করিয়ে দেন যে ইসরায়েল নিজে থেকে যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, কম্পাউন্ডটি জাতিসংঘের স্থাপনা হিসেবেই থাকবে এবং এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েল জাতিসংঘের প্রিভিলেজ ও ইমিউনিটিজ কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ।
উল্লেখ্য, এ বছরের শুরু থেকেই জাতিসংঘের এই সংস্থাটি নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দেশের অভ্যন্তরে সংস্থাটির সব অফিস খালি ও কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ইসরায়েল দাবি করেছিল যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হওয়া হামলায় ইউএনআরডব্লিউএর কিছু কর্মী যুক্ত ছিলেন। তবে ইউএনআরডব্লিউএ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানান, ইসরায়েলি অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আইসিজে আরও জানিয়েছিল, গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর তৎপরতাসহ জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম সমর্থন করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তবুও ইসরায়েলের অভিযোগের জেরে ইউএনআরডব্লিউএর সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়, যা সংস্থাটির কার্যক্রমে চরম বাধা সৃষ্টি করে।
এই পরিস্থিতিতে ইউএনআরডব্লিউএ গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে আন্তর্জাতিক কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে গাজায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনিরা খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের ভয়ানক সংকটে ভুগছেন।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসেবে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাজার ৩৬৫ জন নিহত হয়েছেন।
ইউএনআরডব্লিউএ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত লাখো ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সহায়তা ও আশ্রয় দিয়ে থাকে।
চলমান মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে এই অভিযান সংস্থাটির কার্যক্রমে আরও গুরুতর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।