ঘরে বানান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিউশন রেন্ডাং বার্গার-সুপারহিট রেসিপি!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে ফিউশন কুইজিন এখন শুধু নতুন স্বাদের প্রলোভনই নয়, বরং একধরনের রন্ধন–সংস্কৃতির বহমানতা। ঠিক সেই ধারারই নতুনতম চমক ফিউশন রেন্ডাং বার্গার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী রেন্ডাং যে গরুর মাংসের গভীর মশলার রান্নাটি শত শত বছর ধরে মানুষের স্বাদকে মুগ্ধ করেছে, এবার সেই ঐতিহ্য আধুনিক পাশ্চাত্য বার্গারের সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি করছে এক অনন্য বৈচিত্র্য। রেন্ডাং এর জটিল মশলার ঘ্রাণ, নারকেল দুধে ধীরে ধীরে সেদ্ধ হওয়া কোমল মাংস, লেমনগ্রাসের সাইট্রাস সুবাস সবকিছু যখন বার্গার বান, চিজ ও তাজা সালাদের সঙ্গে মিশে যায়, তখন জন্ম হয় এক অবিশ্বাস্য স্বাদের যাত্রা।
ইন্দোনেশিয়ার মিনাংকাবাউ সম্প্রদায় রেন্ডাংকে শুধু খাবার নয় একধরনের সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে দেখে। রেন্ডাং রান্নাটি তিন বৈশিষ্ট্যে অনন্য—
☞ ধীর আঁচে দীর্ঘ সময় রান্না,এতে মাংস সুপার কোমল হয়।
☞ নারকেল দুধের বডি, যা খাবারকে ক্রিমি টেক্সচার দেয়।
☞ মশলার বৈজ্ঞানিক মিশ্রণ-আদা, লেমনগ্রাস, হলুদ, রসুন, মরিচ, যার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য খাবারকে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণে সাহায্য করে।
ফলে গাঢ়, সুবাসময়, উমামি–সমৃদ্ধ এক স্বাদ, যা বার্গারের সাথে অসাধারণভাবে মানিয়ে যায়।
ফিউশন রেন্ডাং বার্গার কেন এত জনপ্রিয়?
১) উমামি + ফ্যাট + সুগন্ধ—এই ত্রয়ীর মিলনে স্বাদবর্ধক বৈজ্ঞানিক রসায়ন তৈরি হয়।
২) রেন্ডাংয়ের গভীর মশলা বার্গারের সিম্পল উপাদানের সাথে কনট্রাস্ট তৈরি করে।
৩) আধুনিক খাবারের বৈচিত্র্য খোঁজার প্রবণতায় এই ফিউশন তরুণদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
৪) সোশ্যাল মিডিয়ার “গ্লসমি” ফুড স্টাইলিং—রেন্ডাং বার্গারের চকচকে ব্রাউন গ্লেজ, গলে যাওয়া চিজ, ও ধোঁয়াটে গরুর মাংসের স্তর দৃষ্টিগতভাবেই লোভনীয়।
রেসিপি:
উপকরণসমূহ:
⇨ গরুর মাংস কিমা – ৪০০ গ্রাম
⇨ পেঁয়াজ – ১টি (কুচানো)
⇨ রসুন – ৪ কোয়া
⇨ আদা – ১ চা চামচ
⇨ লেমনগ্রাস – ১টি (বাটা বা থেঁতো)
⇨শুকনা মরিচ বা কাঁচা মরিচ – স্বাদমতো
⇨ নারকেল দুধ – ১ কাপ
⇨ হলুদ – ½ চা চামচ
⇨ ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
⇨ জিরা গুঁড়া – ½ চা চামচ
⇨ লবণ – স্বাদমতো
⇨ তেল – ২ টেবিল চামচ
বার্গারের জন্য:
⇨ বার্গার বান – ২টি
⇨ লেটুস – প্রয়োজনমতো
⇨ টমেটো স্লাইস – ৪–৬টি
⇨ ক্যারামেলাইজড পেঁয়াজ – ½ কাপ (ঐচ্ছিক)
⇨ চেডার চিজ স্লাইস – ২টি
⇨ মায়ো + লেমন + মরিচের ফিউশন সস – ৩–৪ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
মিনি রেন্ডাং বেস তৈরি:
১. প্যানে তেল গরম করুন।
২. পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ভাজুন যতক্ষণ সুবাস বের হয়।
৩. লেমনগ্রাস দিন (সাইট্রাস সুবাসের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ)।
৪. এখন গরুর কিমা দিন এবং ক্রমাগত ভাজতে থাকুন।
৫. লবণ, মরিচ, হলুদ, ধনে, জিরা দিয়ে ভালভাবে মেশান।
৬. নারকেল দুধ ঢেলে দিন এবং খুব কম আঁচে ৩০–৪০ মিনিট রান্না হতে দিন।
রেন্ডাং কিমা ঘন হয়ে সুগন্ধ বের হয়ে আসবে, টেক্সচার হবে সেমি–ড্রাই। এটাই আপনার রেন্ডাং বার্গারের মূল হৃদয়!
বার্গার প্যাটির প্রস্তুতি:
রেন্ডাং কিমাই এখানে প্যাটির কাজ করবে।
১. রেন্ডাং ঘন হলে দুই ভাগে ভাগ করুন।
২. হালকা গোল প্যাটির আকারে চাপ দিন।
৩. চাইলে হালকা ব্রাশ করে তেল লাগিয়ে গ্রিল প্যানে প্রতি পাশে ৩–৪ মিনিট সেঁকে নিতে পারেন।
৪. প্যাটির ওপর চেডার চিজ রেখে গলিয়ে নিন।
সস তৈরি:
একটি ছোট বাটিতে,
⇨ মায়োনিজ ৩ টেবিল চামচ
⇨ লেবুর রস ১ চা চামচ
⇨ মরিচ গুঁড়া বা চিলি ফ্লেক্স ½ চা চামচ
⇨ সামান্য লবণ
এগুলো ভালোভাবে মেশান। এই সস বার্গারে দেবে রেন্ডাংয়ের মশলার সাথে মানানসই টক–ক্রিমি কিক।
বান টোস্ট করা:
১. বান দু’ভাগ করুন।
২. হালকা মাখন মাখিয়ে প্যানে সামান্য ব্রাউন হওয়া পর্যন্ত টোস্ট করুন।এতে বান নরম থাকে, আবার ভেতরটা খটখটে রাখে, বার্গারের সামগ্রিক টেক্সচারে নিখুঁত ব্যালান্স দেয়।
বার্গার সাজানো:
☞ বান-এর নিচের অংশে সস লাগান।
☞ লেটুস পাতার স্তর দিন।
☞ চিজ গলা রেন্ডাং প্যাটি রাখুন।
☞ টমেটো স্লাইস যোগ করুন।
☞ চাইলে ক্যারামেলাইজড পেঁয়াজ দিন।
☞ উপরের বান-এও সামান্য সস লাগিয়ে বন্ধ করুন।অল্প চাপ দিয়ে বার্গারটি তৈরি করুন। ঘ্রাণেই বুঝিয়ে দেবে এটি সাধারণ বার্গার নয়, এক ভিন্ন রন্ধন–অভিজ্ঞতা।
গরম অবস্থায় পরিবেশন সবচেয়ে ভালো। পাশে রাখতে পারেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা মশলাদার পটেটো ওয়েজেস। চাইলে সামান্য লেমনগ্রাস–ইনফিউজড আইস টি দারুণ মানিয়ে যাবে। রেন্ডাংয়ের ঘ্রাণ আরও বাড়াতে বার্গারের ওপরে সামান্য ভাজা নারকেল ছড়িয়ে দিতে পারেন।
ফিউশন রেন্ডাং বার্গার ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী রান্নার ধীরপাকা ঘ্রাণ পশ্চিমা বার্গারের ফাস্ট–স্পিরিটকে ছুঁয়ে যায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।