পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়! বিশ্বজুড়ে রহস্য ও ভবিষ্যতের বিপদের সতর্ক সংকেত

পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়! বিশ্বজুড়ে রহস্য ও ভবিষ্যতের বিপদের সতর্ক সংকেত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর মধ্যবর্তী চৌম্বক ক্ষেত্রের ক্রমশ পরিবর্তন, যা আগেও কখনো ইতিহাসে ঘটেছে, সম্প্রতি আবারো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের এই ধীর পরিবর্তন কেবল ভূ-প্রকৃতির একটি ঘটনা নয়, বরং এটি প্রযুক্তি, মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে, ইসলামের আখিরাতের আলামত হিসেবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র স্থির নয়। এটি ক্রমশ পরিবর্তিত হয় এবং গত কয়েক মিলিয়ন বছরে কয়েকবার মেরু উল্টেছে। বিশেষ করে প্রায় ৭৮০,০০০ বছর আগে পৃথিবীর চৌম্বক মেরু উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, উত্তর চৌম্বক মেরু পুনরায় ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই পরিবর্তন অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে, যা কয়েক হাজার বছরের মধ্যে তেমন কোনো হঠাৎ প্রভাব ফেলবে না। তবে প্রযুক্তি নির্ভর মানব সভ্যতায় এটি বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
 

চৌম্বকক্ষেত্র দুর্বল হলে পৃথিবী সূর্যের বিভিন্ন বিকিরণের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে স্যাটেলাইট, জিপিএস, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে সৌরঝড় ও চুম্বকীয় কণার প্রভাব বেড়ে যায়। এতে করে যোগাযোগ সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে, বিমান ও সামুদ্রিক যাত্রী চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া  সৌরঝড় বৈদ্যুতিক লাইন ও পাওয়ার গ্রিডে ক্ষতি করতে পারে। এটি নগর জীবনে অন্ধকার বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হতে পারে এমনকি স্যাটেলাইটে সূর্যের চার্জড কণার আঘাত জিপিএস সিগনালকেও প্রভাবিত করতে পারে। সামুদ্রিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক নেভিগেশনে এটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছেন, চৌম্বকক্ষেত্রের এই পরিবর্তন সরাসরি ক্যান্সার মহামারি বা ভূমিকম্পের সাথে সম্পর্কিত নয়। 
 

ইসলামে সূর্য পশ্চিম থেকে উঠা কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে বর্ণিত। হাদিসে এসেছে—

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘যতদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবেনা ততদিন কিয়ামত হবেনা। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখতে পাবে তখন সকলেই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি’’। {বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।}


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ  ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দিনের বেলায় অপরাধকারীদের তাওবা কবূল করার জন্য সারা রাত স্বীয় হাত প্রসারিত করে রাখেন এবং রাতের বেলায় অপরাধকারীদের তাওবা কবূল করার জন্য সারা দিন তাঁর হাত প্রসারিত করে রাখেন। পশ্চিম আকাশ দিয়ে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তাওবার দরজা খোলা থাকবে’’।{মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা। }
 

ইমাম কুরতুবী পূর্ববর্তী যামানার আলেমদের থেকে বর্ণনা করে বলেনঃ পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার পর ঈমান ও তাওবা কবূল না হওয়ার করণ এই যে, তখন অন্তরে ভয় ঢুকে যাবে, পাপ কাজ করার আশা-আকাঙ্খা মিটে যাবে এবং শরীরের শক্তি শেষ হয়ে যাবে। কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় সকল মানুষ মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে উপস্থিত ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাবে। তাই পশ্চিম আকাশে সূর্য দেখে কেউ তাওবা করলে তার তাওবা কবূল হবেনা। যেমন মালকুল মাওতকে দেখে তাওবা করলে কারো তাওবা কবূল হয়না। {তাফসীরে কুরতুবী, ৭/ ১৪৬}
 

ইমাম ইবনে কাছীর বলেনঃ ‘‘সে দিন যদি কোন কাফের ঈমান এনে মুসলমান হয়ে যায় তার ঈমান গ্রহণ করা হবেনা। সে দিনের পূর্বে যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে যদি ঈমানদার হওয়ার সাথে সাথে সৎকর্ম পরায়ন হয়ে থাকে তাহলে সে মহান কল্যাণের উপর থাকবে। আর যদি সে গুনাহগার বান্দা হয়ে থাকে এবং পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠতে দেখে তাওবা করে তার তাওবা কবূল হবেনা’’।{তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৩/৩৭১)। }

অর্থাৎ এটি এক অলৌকিক, কুদরতি ঘটনা যা পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে সংঘটিত হবে। বিজ্ঞান যেভাবে চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন ব্যাখ্যা করে, এটি তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না। এটি মানবজাতিকে সতর্ক করে সঠিক পথে থাকা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং তওবা করা। সূর্যের পশ্চিম থেকে উদয় হবে, এটি কেয়ামতের নিশ্চিত আলামত। মুসলিমদের জন্য এটি মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের জীবনটা কতটা ক্ষণস্থায়ী।

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে, এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। বিজ্ঞান এবং ইসলাম দুই প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও, প্রতিটিই আমাদেরকে সতর্ক থাকার এবং সচেতনভাবে জীবনযাপন করার শিক্ষা দেয়। ইসলাম আমাদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জীবন গঠনের নির্দেশনা দেয়। যদি মানুষ এই জ্ঞানকে সঠিকভাবে গ্রহণ করে, আল্লাহর রাজি খুশির জন্য  নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সপে দেয়, তাহলে কেবল প্রকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং আধ্যাত্মিক বিপর্যয় থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে রাখুন, সঠিক বুঝ ও কল্যাণকর  জ্ঞান দান করুন। আমিন সুম্মা আমিন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ