আত্মমর্যাদা রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা: গর্বিত ও সম্মানিত জীবনের পথনির্দেশ

আত্মমর্যাদা রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা: গর্বিত ও সম্মানিত জীবনের পথনির্দেশ
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইসলাম ব্যক্তির আত্মমর্যাদাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তবে এটি সীমিত করে দিয়ে বলে, ‘সমস্ত হারাম কাজ আত্মমর্যাদার পরিপন্থী।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কেউ নেই। এজন্যই তিনি প্রকাশ্য ও গোপন সব ধরনের অশ্লীলতা হারাম করেছেন। প্রশংসা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়, তাই তিনি নিজের প্রশংসা নিজেই করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৫৮)

আত্মমর্যাদা ঈমানের অংশ
আত্মমর্যাদা মানুষকে সততা ও ন্যায়ের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মমর্যাদা ঈমানের অংশ, আর আচরণে উগ্রতা কপটতার লক্ষণ।’ (সুনানে বায়হাকি: ১০/২২)

যেসব আমলে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়
মুমিনের আত্মমর্যাদা আল্লাহর আনুগত্য ও সৎ জীবনযাপনের মাধ্যমে বিকশিত হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পবিত্রতা বজায় রাখার মাধ্যমে আত্মমর্যাদা বাড়ে। ইসলাম এ লক্ষ্যে কিছু বিশেষ বিধান দিয়েছে:

১. নারীর পর্দা
নারীর সম্মান ও সম্ভ্রম তার পরিবার ও সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। ইসলাম নারীর সুরক্ষা ও সম্মান রক্ষায় পর্দার বিধান ফরজ করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন নারীরা যেন সাধারণত প্রকাশ্য সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কিছু প্রদর্শন না করে এবং তাদের ঘাড় ও বুক মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১)

২. দৃষ্টি সংযত করা
অশ্লীল দৃষ্টি নারীর লজ্জা ও সম্মানকে ক্ষুণ্ন করে এবং পুরুষের আত্মমর্যাদাকে আঘাত করে। ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩০)

৩. লজ্জা ও শালীনতা
লজ্জাহীনতা মানুষকে ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) লজ্জাকে ঈমানের অংশ এবং সর্বোত্তম গুণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪) অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৭)

সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা
নিজের ও পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে কেউ নিহত হলে ইসলাম তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেছে। তবে এটি মিথ্যা অহংকার বা জাগতিক সম্মানবোধের জন্য নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ, যে তার পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ, যে তার দ্বিন রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ, যে আত্মরক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৪০৯৫)

৫. আত্মশুদ্ধি
আত্মমর্যাদাবোধ লাভের পূর্বশর্ত হলো আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। লোভ, অহংকার, হিংসা, ক্রোধ ইত্যাদি মানবীয় দুর্বলতা মানুষকে পাপের দিকে ঠেলে দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সফল হলো সে, যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলো সে, যে আত্মাকে কলুষিত করল।’ (সুরা আশ-শামস, আয়াত: ৯-১০)

আত্মমর্যাদাহীনতার নিন্দা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আত্মমর্যাদাহীন ও নির্লজ্জ মানুষের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে, তখন বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এ কাজ করতে দেখেছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। বলুন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৮)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মমর্যাদাবোধের মহান গুণ দান করুন এবং তা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


সম্পর্কিত নিউজ