স্মৃতিশক্তি দ্রুত কমে যাওয়ার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণসমূহ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান ব্যস্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে অনেকেই অভিযোগ করেন, "আগের মতো কিছুই মনে থাকে না!" স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া এখন আর শুধু বয়স্কদের সমস্যা নয়; তরুণরাও আজকাল নানা কারণে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। গবেষণা বলছে, আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস ও জীবনধারাই এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
১. ঘুমের অভাব:
নিউরোসায়েন্স জার্নাল অনুযায়ী, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হিপোক্যাম্পাসে (মস্তিষ্কের স্মৃতির কেন্দ্রে) তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নতুন কিছু শেখা এবং পুরনো তথ্য মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
২. অতিরিক্ত স্ট্রেস ও দুশ্চিন্তা:
কর্টিসল নামক হরমোন দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তার সময় অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসরণ হয়, যা মস্তিষ্কের নিউরনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন স্ট্রেসে থাকলে স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
৩. অপর্যাপ্ত পুষ্টি ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব স্মৃতিশক্তির অবনতিতে বড় ভূমিকা রাখে। ফাস্টফুড নির্ভর ডায়েট স্মৃতিশক্তি হ্রাসে পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে।
৪. প্রযুক্তিনির্ভরতা ও অল্প মানসিক ব্যবহার:
প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের চিন্তাশক্তিকে অলস করে তুলছে। গবেষকরা বলছেন, স্মার্টফোন বা গুগলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আমাদের মস্তিষ্ককে কম কাজ করতে বাধ্য করছে, ফলে স্মৃতি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
৫. অ্যালকোহল ও ধূমপানের মতো বদভ্যাস:
এই দুটি বিষ মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার ভারসাম্য নষ্ট করে। অতিরিক্ত সেবনে স্মৃতি সংরক্ষণকারী নিউরনের মৃত্যু ঘটে, ফলে স্মৃতিশক্তি দ্রুত হ্রাস পায়।
৬. শরীরচর্চার অভাব:
নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। এর অনুপস্থিতিতে স্মৃতি ও মনোযোগে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার এবং প্রতিদিন কিছুটা সময় ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ রাখলে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা সম্ভব। তাছাড়া, ধাঁধা, বই পড়া বা নতুন কিছু শেখার অভ্যাসও মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস কোনো একদিনে ঘটে না। আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট ভুল অভ্যাসই একসময় বড় সমস্যা তৈরি করে। সচেতনতা এবং নিয়মিত জীবনের মধ্য দিয়েই সম্ভব সুস্থ ও স্মরণযোগ্য জীবন।