ভুটান-সেভেন সিস্টার্সের জন্যেও চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহারযোগ্য করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফরে এসে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন। শনিবার সকালে বন্দরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি বন্দরটিকে “বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই হৃৎপিণ্ড শুধু বাংলাদেশের জন্য না, আশেপাশের দেশগুলোর জন্যেও। যে কারণে নেপালের কথা বললাম, ভুটানের কথা বললাম, সেভেন সিস্টার্সের কথা বললাম। সবার জন্যে হৃৎপিণ্ড একটাই। নেপালের হৃৎপিণ্ড নেই। কাজেই আমাদের হৃৎপিণ্ড দিয়ে তাদেরও চলতে হবে। আমরা তাদেরকে সংযুক্ত করতে চাই।”
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সংযোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের লাভ, তাদেরও লাভ। এমন নয় যে মেহেরবানি করছি, মেহেরবানির বিষয় নয়। ভুটান, সেভেন সিস্টার্স সংযুক্ত হলে তারাও লাভবান হবে, আমরাও লাভবান হবো। যারা এই হৃৎপিণ্ডকে বাদ দেবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা তাদেরও কাম্য নয়, আমাদেরও কাম্য নয়। আমরা চাই সবাই মিলে এ বন্দর থেকে যেন সঞ্চালনটা পাই। অর্থনৈতিক শক্তিটা পাই।”
বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ অবদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "এটা পরিবর্তন না করে বাংলাদেশের কোনো অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব না।”
উল্লেখ্য, ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে দুটি মুরিং জেটি নির্মাণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দর স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ৭২ শতাংশই হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এই বন্দরের সংস্কার এবং পরিবর্তনের শ্লথ গতি সম্পর্কেও গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর আমার কাছে কোনো অপরিচিত জায়গা না। যেহেতু এখানে বড় হয়েছি, ছাত্রাবস্থায় এখানে এসেছি জাহাজ দেখার জন্যে। জাহাজ থেকে মাল খালাসের সেই দৃশ্য ভিন্ন জিনিস। খোলের ভেতরে গিয়ে মাথায় বস্তা বস্তা ওপরে উঠাচ্ছে। তারপর ক্রেন আসলো পরবর্তী পর্যায়ে। সেই পর্যায় থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আজ বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু বরাবরই দুঃখ, এটার পরিবর্তন এত শ্লথ কেন? দুনিয়ার সবকিছু বদলে যাচ্ছে, আমাদের এখানে এটা পালটায় না কেন?”
ছাত্রাবস্থার স্মৃতিচারণ করে জাহাজে মাল খালাস করতে না পারার কারণে রাস্তায় তৈরি হওয়া সংকট সম্পর্কেও তিনি বলেছেন। বর্তমান সময়ে বন্দরের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম যথাসময়ে শেষ করতে তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন। সেই সাথে বন্দরের উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন অংশীজনকে সাথে নিয়ে কাজ করার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। বন্দরের উন্নয়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের কথাও বলেছেন, যারা ইতঃপূর্বে বিভিন্ন বড় বড় বন্দরে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বন্দরের কাজের গতি বাড়লে বন্দরে আরও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন বক্তব্য রাখেন এবং বন্দর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আশা করি প্রধান উপদেষ্টা আবার আসবেন, আমাদের সময় দেবেন। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, ছয় মাস পরে দেখবেন বন্দর অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে।”