"ওভারথিংকিং" – নিঃশব্দ মানসিক দুর্যোগে ভুগছে তরুণ প্রজন্ম

"ওভারথিংকিং" – নিঃশব্দ মানসিক দুর্যোগে ভুগছে তরুণ প্রজন্ম
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

নিরব এক মানসিক ব্যাধি যেটি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে হাজারো তরুণ-তরুণীর আত্মবিশ্বাস, ঘুম, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং জীবনযাপনের স্বাভাবিক গতি—এটি হলো ওভারথিংকিং বা অতিরিক্ত চিন্তা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, "ওভারথিংকিং" এমন এক মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি কোনও ঘটনা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভেবে যায়, তা ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই চিন্তাগুলো নেতিবাচক, আত্মদ্রোহী এবং অনুৎপাদনশীল।

বাস্তবচিত্র: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেন্টাল হেলথ (BAMH)-এর এক জরিপে দেখা গেছে,

১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৬২% তরুণই জানান, তারা নিয়মিত ওভারথিংকিংয়ে ভোগেন।

এর মধ্যে নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলক বেশি (৭১%), বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব, পারিবারিক প্রত্যাশা ও ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা এর পেছনে দায়ী।
 

ওভারথিংকিংয়ের প্রভাব:

১। ঘুমের ব্যাঘাত: রাতে চিন্তায় ঘুমাতে না পারা, দুঃস্বপ্ন

২। নিজেকে দোষারোপ করা: বিগত কোনো ভুল সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্ত চিন্তা

৩। অসামাজিকতা: সামাজিকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা

৪। মানসিক ক্লান্তি: দিনশেষে কাজ না করেও ক্লান্ত বোধ করা

৫। মাইগ্রেন ও উদ্বেগের বৃদ্ধি : ওভারথিংকিং খুব সহজে চোখে পড়ে না। এটি ধীরে ধীরে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে এবং তাকে মানসিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়।
 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীর হাসান বলেন, "একটা ছোট ঘটনা বা কথা নিয়েও আমি অনেক সময় ধরে ভাবি। যেটা হয়তো অন্য কারো জন্য তুচ্ছ, সেটা আমার মাথা থেকে যায় না।"

করণীয়:

১। চিন্তাকে লিখে ফেলা: মনের জটিলতা কাগজে আনলে তা কিছুটা হালকা হয়।

২। সীমিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার

৩।নিয়মিত মেডিটেশন ও ব্যায়াম

৪।মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা

৫।প্রয়োজনে পেশাদার পরামর্শ নেওয়া
 

ওভারথিংকিং কোনো অলস বা অতিমনোযোগী হওয়ার লক্ষণ নয়—এটি একটি বাস্তব এবং গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সংকট। প্রযুক্তি ও ব্যস্ততার যুগে নিজেকে সচেতন রাখা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

"মন ভালো না থাকলে, কোনো সাফল্যই পূর্ণতা পায় না।"


সম্পর্কিত নিউজ