মুড সুইং: নারীর নীরব যুদ্ধ—বুঝতে হবে, উপেক্ষা নয়

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন? বেলা দশটায় যিনি হাস্যোজ্জ্বল, দুপুরে তিনিই ক্লান্ত, বিরক্ত বা হয়তো চোখ ভেজা। আশপাশের কেউ বলেন, "মুডি" বা "বেশি সেনসিটিভ"—কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব আচরণের পেছনে কি শুধু আবেগ, নাকি আরও গভীর কিছু? "মুড সুইং"—এই শব্দটি প্রায়শই অবজ্ঞার সুরে ব্যবহৃত হলেও, নারীদের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসংকেত, যার রয়েছে স্পষ্ট শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক ব্যাখ্যা।
➤ হরমোনের ওঠানামা: শরীরের এক অন্তর্দ্বন্দ্ব
নারীদের দেহে প্রতি মাসেই ঘটে যায় একাধিক জৈব-রাসায়নিক পরিবর্তন। মাসিকচক্র, গর্ভধারণ, সন্তান জন্মের পরের সময় কিংবা মেনোপজ—প্রতিটি ধাপে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ওঠানামা ঘটে। এই হরমোনগুলো সরাসরি প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী অংশে।
এ কারণে দেখা দেয়—
১। আকস্মিক মন খারাপ
২। অস্থিরতা বা ঝগড়াটে ভাব
৩। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা
৪। ক্লান্তি ও মনোযোগে ঘাটতি
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই পরিবর্তনগুলোর জন্য নারী নিজেও দায়ী নন, এটি পুরোপুরি জৈবিক ও প্রাকৃতিক। কিন্তু সমস্যাটা হয় যখন সমাজ এই বিষয়টিকে 'অতিরিক্ত' বা 'নাটকীয়' বলে ভুল ব্যাখ্যা করে।
➤ মুড সুইং কখন লক্ষণ হয়ে ওঠে?
১। মাসিকের আগে বা সময়কালে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হওয়া
২। গর্ভাবস্থায় হঠাৎ হাসি-কান্না
৩। সন্তান জন্মের পর বিষণ্নতা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
৪। মেনোপজ চলাকালে ঘনঘন রাগ বা উদ্বেগ
এসব অবস্থায় একজন নারী নিজের ভেতরেই লড়ছেন, যা বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। অথচ পরিবার, সহকর্মী বা ঘনিষ্ঠজনের একটু সহানুভূতি হতে পারে বড় উপশম।
প্রতিকার: চিকিৎসার চেয়ে জীবনধারার প্রাধান্য
১। খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাবার, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২। ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম বা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা—ডোপামিন ও এন্ডরফিন হরমোন বাড়ায়, যা মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩। মাইন্ডফুলনেস বা মেডিটেশন: স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত মেডিটেশন, নিঃশ্বাস-নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন ভালো ফল দেয়।
৪। মানসিক সমর্থন ও সংলাপ: নিজের অনুভূতি পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া মুড সুইং হালকা করতে পারে।
✪✪ গুরুত্বপূর্ণ: যদি কোনো নারী দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিক রকমের মনমেজাজের তারতম্য অনুভব করেন, তবে শুধু জীবনধারা নয়, একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
➤ সামাজিক বাস্তবতা: নারীর অভ্যন্তরীণ সংগ্রামে সমাজের নীরবতা
আজও অনেক নারী "বুঝতে পারছো না কেন আমি এমন করছি" বলার সাহস পান না। কারণ, সমাজ মুড সুইংকে নাটকীয়তা হিসেবে চিহ্নিত করে। অথচ এই অনুভবের পেছনে রয়েছে গভীর শারীরিক ও মানসিক যুক্তি।
➤ প্রয়োজন সামাজিক সহানুভূতির আন্দোলন
মুড সুইং কোনো নারীর ব্যর্থতা নয়—এটি একেবারে মানবিক, বৈজ্ঞানিক ও সহানুভূতির দাবিদার একটি প্রক্রিয়া। স্কুল, কর্মক্ষেত্র ও পরিবারে এই বিষয়ে আলোচনা বাড়ানো এবং 'বোঝার মানসিকতা' গড়ে তোলা প্রয়োজন।
-একজন নারী যখন নিজের আবেগ, শারীরিক যন্ত্রণা ও সামাজিক চাপের সঙ্গে একাই লড়েন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ানোই মানবিক দায়িত্ব। মুড সুইংকে বোঝা এবং স্বীকৃতি দেওয়াই পারে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে শেখাতে আমাদের।