সংকটেও টিকে থাকার কৌশল: ধৈর্য, পরিশ্রম ও ইতিবাচকতা

সংকটেও টিকে থাকার কৌশল: ধৈর্য, পরিশ্রম ও ইতিবাচকতা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক অস্থিরতা—এই মুহূর্তে পৃথিবী যেন এক বৈশ্বিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম এবং ইতিবাচক মনোভাব—বিশেষজ্ঞরাও একমত এই বাস্তবতায়।

সংকট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী

বিশ্বব্যাপী বহু মানুষ প্রতিদিন কোনও না কোনও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন—চাকরিচ্যুতি, স্বাস্থ্য সংকট, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কিংবা পারিবারিক অস্থিরতা। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নেই। সাম্প্রতিক একাধিক জরিপে দেখা গেছে, নাগরিকদের একটি বড় অংশ মানসিক চাপে ভুগছেন, যার মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতের প্রতি উদ্বেগ।

কিন্তু এর মাঝেও কিছু মানুষ হাল ছাড়ছেন না—তাঁরা সংকটকে দেখছেন শিখন ও অভিযোজনের সুযোগ হিসেবে।
 

ধৈর্য: তাড়াহুড়ো নয়, পরিকল্পিত এগিয়ে চলা

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংকটের সময় যারা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক রেখে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান, তারাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। চাকরির বাজারে যেমন প্রতিযোগিতা তীব্র, তেমনি ব্যবসায়ও অপ্রত্যাশিত ওঠানামা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করাই অধিক কার্যকর।
 

পরিশ্রম: বিকল্পহীন চালিকাশক্তি

অভাব-অনটনের সময়ে জীবনযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো পরিশ্রম। বিগত কয়েক বছরে যারা নতুন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পেরেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা বলে—সময় ও শ্রমের সঠিক ব্যবহারই সংকট থেকে উত্তরণের চাবিকাঠি।

একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যখন টানা তিন মাস বিক্রি না হওয়ার পরেও দমে না গিয়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রির উপায় বের করেন—সেই পরিশ্রমই তাকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে।
 

ইতিবাচকতা: মানসিক স্বাস্থ্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক

নানামুখী সমস্যার মুখেও যাঁরা আশাবাদী থাকেন, তাঁদের মানসিক দৃঢ়তা তুলনামূলকভাবে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক মানসিকতা শুধু মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে না, বরং জটিল পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। এই মনোভাব মানুষকে বারবার চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সফলতার সম্ভাবনা বাড়ায়।

সংকটকালীন উদ্যোগ ও পারস্পরিক সহানুভূতি

যেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে ধৈর্য, পরিশ্রম ও ইতিবাচকতা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা না থাকলে এগুলোও অনেক সময় পর্যাপ্ত হয় না। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, ছোট ছোট কমিউনিটি গোষ্ঠী একে অপরকে সহায়তা করে অনেক পরিবারকে সংকট থেকে রক্ষা করেছে।

চট্টগ্রামের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ কাউন্সেলিং সেশন শুরু করেছে, যদিও তা সীমিত পরিসরে। রাজধানীতে কিছু যুব গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য।

ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগামী দিনে সংকট আরও তীব্র হতে পারে—জলবায়ু, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন কিংবা বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাব। সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দক্ষতা অর্জন, সংযোগ সৃষ্টি এবং মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিংবা একজন গার্মেন্টস কর্মী—যে যেখানেই থাকুন না কেন, জীবন আজ শিখিয়ে দিচ্ছে—"বেঁচে থাকাই বড় সংগ্রাম", আর এই সংগ্রামে টিকে থাকতে হলে চাই ধৈর্য, পরিশ্রম ও একটি ইতিবাচক মানসিকতা।


সম্পর্কিত নিউজ