চোখ হেফাজতের গুরুত্ব: পরনারী থেকে বিরত থাকাই স্ত্রীর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা ও ইমানের প্রমাণ

চোখ হেফাজতের গুরুত্ব: পরনারী থেকে বিরত থাকাই স্ত্রীর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা ও ইমানের প্রমাণ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বর্তমান যুগে যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বাহ্যিক আকর্ষণের প্রলোভন সর্বত্র, সেখানে একজন বিবাহিত পুরুষের পক্ষে নিজেকে সংযত রাখা ক্রমেই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। তবে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় এটি স্পষ্ট—পরনারী থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং একজন স্ত্রীর প্রতি সবচেয়ে বড় সম্মান এবং ভালোবাসার প্রকাশ।

ইসলামে চোখের সংযম- 

ইসলামে দৃষ্টি সংযমের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে। কুরআনের সূরা আন-নূর (২৪:৩০-৩১)-এ আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন:

"মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।"

এখানে 'দৃষ্টি সংযত করা' মানে শুধু চোখ নামিয়ে রাখা নয়, বরং নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে অবৈধ সম্পর্ক বা কল্পনার মধ্যে না পড়ে। এটি ইমানের শক্তি এবং চরিত্রের দৃঢ়তার পরিচায়ক।

 

স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববোধ: কথায় নয়, কাজে

প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা মানে উপহার, কথার ফুলঝুরি বা সামাজিকভাবে একে অপরকে নিয়ে ছবি পোস্ট করা। কিন্তু আসল ভালোবাসা প্রকাশ পায় তখন, যখন একজন স্বামী তার চোখ ও মন অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া থেকে বিরত রাখেন। এটি কেবল একধরনের আত্মনিয়ন্ত্রণ নয় – বরং স্ত্রীকে মানসিক নিরাপত্তা দেওয়ার একটি গভীর উপায়।

একজন নারী তখনই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও সম্মানিত বোধ করেন, যখন তার সঙ্গী তার প্রতি একনিষ্ঠ থাকেন – দৃষ্টিতে, মনে ও আচরণে।
 

সামাজিক বাস্তবতা ও পারিবারিক সমস্যা

সমাজে বর্তমান সময়ে দাম্পত্য কলহ ও বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—বহির্জগতের প্রতি অপ্রয়োজনীয় আগ্রহ, যা শুরু হয় 'দৃষ্টির অসতর্কতা' থেকে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অচেনা নারীর প্রতি আগ্রহ, কিংবা অফিস-সহপাঠী নারীর সঙ্গে অনুপযুক্ত ঘনিষ্ঠতা ধীরে ধীরে পরিবারের ভিত নড়িয়ে দেয়। অনেক সময় পুরুষরা বিষয়টিকে "তেমন কিছু নয়" বলে এড়িয়ে যান, কিন্তু একজন স্ত্রীর কাছে এটি হয়ে ওঠে আঘাত, বিশ্বাসহীনতা এবং মানসিক দূরত্বের সূচনা।

ইমানের বাস্তব পরীক্ষা

ইমান কেবল নামায-রোযা বা দাড়ি-টুপি দিয়ে প্রমাণ হয় না। একজন পুরুষের আসল ইমান তখনই চেনা যায়, যখন সে এমন কোনো পরিবেশে থেকেও নিজের চোখ, মন এবং আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যেখানে অবৈধ আকর্ষণের সুযোগ সহজেই পাওয়া যায়।

এই আত্মনিয়ন্ত্রণই একজন প্রকৃত মুমিনের গুণ। এটি শুধু নিজের আত্মাকে পবিত্র রাখে না, বরং তার পরিবার ও সমাজেও স্থিতিশীলতা আনে।

আজকের এই ভোগবাদী ও দৃশ্যনির্ভর সমাজে, একজন স্বামীর চোখ হেফাজত করার সিদ্ধান্ত কেবল একটি 'ধর্মীয় দায়িত্ব' নয়, বরং এটি তার স্ত্রীর প্রতি, পরিবারের প্রতি এবং নিজের ইমানের প্রতি সবচেয়ে বড় উপহার ও দায়িত্ব পালন।

"যে চোখ স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীকে কামনার দৃষ্টিতে দেখে না, সেই চোখই স্বামীর প্রকৃত বিশ্বস্ততার পরিচয়।"


সম্পর্কিত নিউজ