কিডনি ধ্বংসের পথে আমাদের নীরব অভ্যাসগুলো

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
কিডনি—শরীরের এমন একটি অঙ্গ, যার কাজ আমরা প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় টেরও পাই না, অথচ তার কার্যকারিতা বন্ধ হলেই জীবন পড়ে যায় মারাত্মক ঝুঁকিতে। রক্ত পরিষ্কার রাখা থেকে শুরু করে শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখা—সবটাই করে কিডনি। কিন্তু অজান্তেই আমরা এমন কিছু বদঅভ্যাসে জড়িয়ে পড়ছি, যেগুলো কিডনির স্বাস্থ্যকে নীরবে ধ্বংস করছে।
নিচে এমন কিছু অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো থেকে সাবধান না হলে কিডনি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে কয়েক গুণ।
☞ রাতে জেগে থাকা ও কম ঘুম—শরীরের বিপরীতে এক নিঃশব্দ যুদ্ধ -- অনেকেই কাজ বা বিনোদনের জন্য রাত জেগে থাকেন। আবার পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদে কম ঘুম কিডনির রক্ত পরিশোধন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ায়, যা কিডনি ক্ষতির অন্যতম কারণ।
☞ পানি কম খাওয়া—দেহে জমে বিষ -- শরীরের টক্সিন অপসারণের মূল মাধ্যম হচ্ছে প্রস্রাব। আর সে কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে কিডনির প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি। যারা দিনে পর্যাপ্ত পানি খান না, তাদের কিডনিতে পাথর, সংক্রমণ কিংবা কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
☞ পেইনকিলারে অভ্যস্ততা—আরাম নয়, কিডনির ক্ষতি -- সাধারণ মাথাব্যথা বা শরীর ব্যথায় যারা নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন, তারা না জেনেই কিডনির ওপর চাপ তৈরি করছেন। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে এসব ওষুধ গ্রহণ কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিয়ে স্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
☞ প্রস্রাব আটকে রাখা—অভ্যাসে বিপদ অনেকেই কাজের ব্যস্ততায় প্রস্রাব আটকে রাখেন। কিন্তু এই অভ্যাসের কারণে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে, যা কিডনিতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ায়।
☞ প্রচুর মাংস খাওয়া—প্রোটিনের চাপে কিডনি ক্লান্ত -- প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য জরুরি হলেও অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ, বিশেষ করে লাল মাংসের পরিমাণ বেশি হলে, কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
☞ অতিরিক্ত মদ্যপান—কিডনির স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটায় -- অ্যালকোহল শরীর থেকে পানি বের করে দেয় দ্রুত, ফলে ডিহাইড্রেশন হয় এবং কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়ে। নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
☞ নিয়মিত কোমল পানীয়—মিষ্টি স্বাদের ভেতরে লুকানো ক্ষতি -- সফট ড্রিংকে থাকা উচ্চ মাত্রার চিনি, ফসফেট ও অন্যান্য কৃত্রিম উপাদান কিডনির স্বাস্থ্যকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দীর্ঘদিন নিয়মিত এসব পানীয় গ্রহণ কিডনির কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
☞ কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস—রক্তচাপ বাড়িয়ে কিডনিতে চাপ তৈরি করে -- অনেকে খাবারের সাথে আলাদা করে কাঁচা লবণ খান, যা শরীরের সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়, আর উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সবচেয়ে বড় শত্রু।
কিডনির যত্ন নিন, কারণ একবার ক্ষতি হলে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে সেটা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তাই প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিবর্তন এনে আগেভাগে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।
সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন। কিডনির স্বাস্থ্য মানেই শরীরের সার্বিক সুস্থতা। অভ্যাস বদলান আজ থেকেই—কারণ কিডনি কিন্তু অপেক্ষা করে না!