টবের গাছের মাটিতে শামুক: উপেক্ষা নয়, জানুন কারণ ও কার্যকর করণীয়

টবের গাছের মাটিতে শামুক: উপেক্ষা নয়, জানুন কারণ ও কার্যকর করণীয়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বর্তমান শহুরে জীবনে টবে গাছ রাখা শুধু শখ নয়, এটি পরিবেশ রক্ষার একটি সচেতন পদক্ষেপও বটে। তবে অনেক গাছপ্রেমী সম্প্রতি একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন—টবের মাটিতে শামুকের উপস্থিতি। এই ঘটনাটি যতটা সাধারণ মনে হয়, এর প্রভাব ততটাই গভীর হতে পারে গাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির ওপর।

শামুক কেন আসে টবের মাটিতে?

শামুক মূলত নিশাচর প্রাণী, যারা আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত পরিবেশে বাস করে। টবের মাটি অনেক সময় শুষ্ক না থেকে আর্দ্র থাকে, বিশেষ করে অতিরিক্ত পানি দিলে বা ড্রেনেজ সিস্টেম দুর্বল হলে। সেইসঙ্গে টবে জমে থাকা শুকনো পাতা, জৈব সার, এবং পচনশীল উপাদানও শামুককে আকর্ষণ করে।

প্রধান কারণগুলো:

১। অতিরিক্ত জলসেচ বা খারাপ নিষ্কাশন ব্যবস্থা

২। টবের নিচে বা কোণায় জমে থাকা আর্দ্র পাতা বা সার

৩। গাছের নিচে অনিয়মিত পরিষ্কার

৪। বর্ষা বা আর্দ্র আবহাওয়া
 

টবের গাছের ক্ষতি কীভাবে হয়?

শামুক দেখতে নিরীহ হলেও ধীরে ধীরে গাছের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১। কচি শিকড়ে ছিদ্র করে – ফলে পানি ও পুষ্টি শোষণে বাধা সৃষ্টি হয়।

২। পাতা কেটে ফেলে – বিশেষ করে সবুজ ও কোমল পাতা খেয়ে ফেলে, যা গাছের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।

৩। ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় – শামুকের দেহে থাকা আর্দ্রতা ও জীবাণু গাছের মাটিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৪। কীভাবে বুঝবেন টবের মাটিতে শামুক আছে?
 

সকালে বা সন্ধ্যায় পাতার নিচে বা মাটির উপর সাদা দাগ বা চিটচিটে পথ দেখা যেতে পারে, যা শামুকের চলার চিহ্ন।

পাতায় ছোট ছোট গর্ত বা কাটা দাগ দেখা যেতে পারে।

মাটি খুঁড়ে দেখলে ছোট শামুক বা তাদের ডিম চোখে পড়তে পারে।

 

করণীয়: কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ করবেন?

☞ মাটি শুকনো রাখুন: প্রতিবার জল দেওয়ার আগে মাটি স্পর্শ করে দেখুন। একেবারে শুকিয়ে গেলে তবেই পানি দিন। 

☞ ড্রেনেজ নিশ্চিত করুন: টবের নিচে অতিরিক্ত পানি যেন জমে না থাকে, সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। 

☞  জৈব উপাদান নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত পচনশীল সার বা পাতা জমে থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন। 

☞ ডিমের খোসা ছড়িয়ে দিন: ডিমের খোসা গুঁড়ো করে টবের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে শামুক আসতে চায় না, কারণ খোসার ধারালো দানা তাদের নরম শরীরের জন্য অস্বস্তিকর। 

☞ তামার টেপ ব্যবহার করুন: টবের চারপাশে তামার পাত বা টেপ লাগালে শামুক এতে বিদ্যুৎপ্রবাহ অনুভব করে এবং টব থেকে দূরে থাকে। 

☞ হাতে তুলে সরিয়ে ফেলুন: সন্ধ্যাবেলা গ্লাভস পরে শামুক সংগ্রহ করে দূরে প্রকৃতিতে ফেলে দিন — যেখানে তারা গাছের ক্ষতি করবে না।
 

দীর্ঘমেয়াদী সমাধান

যদি শামুকের উপস্থিতি নিয়মিত দেখা যায়, তবে মাটি পরিবর্তন করে শুকনো ও ছাঁকা বালি মিশিয়ে দিন। জৈব কীটনাশক বা পরিবেশবান্ধব শামুকনাশকও ব্যবহার করা যায়, তবে তা ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে সেটি গাছের জন্য নিরাপদ কিনা।

টবের গাছের যত্ন শুধু জলসেচ আর সার দেওয়া নয়, বরং পুরো পরিবেশটিকে পরিপাটি ও সুষম রাখা জরুরি। শামুকের মতো ছোট্ট প্রাণীও ধীরে ধীরে গাছের বৃদ্ধিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সঠিক পর্যবেক্ষণ, নিয়মিত পরিচর্যা ও কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সহজেই এ সমস্যা প্রতিরোধ সম্ভব।

সবুজ রাখুন নিজের চারপাশ, সচেতন থাকুন গাছের সুস্থতায়। 


সম্পর্কিত নিউজ