ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি: মহাবিশ্বের অদৃশ্য শক্তির সন্ধানে নতুন অধ্যায়

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মহাবিশ্বের রহস্য যেন প্রতিনিয়ত আমাদের চমকে দেয়। তারই অন্যতম এক অজানা অধ্যায় হলো — ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রগুলোতে এই দুটি রহস্যময় উপাদানের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এই রহস্যকে ঘিরে চলমান অনুসন্ধান ও গবেষণার ফলাফল বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের মনে এক নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে।
ডার্ক ম্যাটার: গ্যালাক্সির গঠন ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি
ডার্ক ম্যাটার বা অদৃশ্য পদার্থ হচ্ছে এমন এক ধরনের বস্তু যা সরাসরি কোনো আলো বা বিকিরণ নির্গত করে না, তাই আমরা এটাকে দেখতে পাই না। তবে এর অস্তিত্ব বুঝতে পারা যায় মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর আচরণ থেকে। গ্যালাক্সির তারা, গ্যাস, ধুলো এবং অন্যান্য বস্তুগুলি একসাথে যুক্ত রয়েছে ডার্ক ম্যাটারের গ্র্যাভিটেশনাল আকর্ষণের মাধ্যমে। এর ফলে গ্যালাক্সির গঠন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মহাবিশ্বের বিকাশে ডার্ক ম্যাটারের ভূমিকা অপরিসীম।
ডার্ক এনার্জি: মহাবিশ্বের বিস্তার বৃদ্ধির গোপন চালিকা শক্তি
যখন আমরা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা ভাবি, তখন প্রথমেই মাথায় আসে বিগ ব্যাং থিওরি। কিন্তু আধুনিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের বিস্তার গতিবেগ ক্রমশ বাড়ছে। এই বিস্তারকে ত্বরান্বিত করার কারণ হলো ডার্ক এনার্জি। এটি একটি ধরণের অদৃশ্য শক্তি, যা মহাবিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিদ্যমান ও মহাবিশ্বকে দ্রুততর সম্প্রসারণে প্ররোচিত করে। এর প্রকৃতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও স্পষ্ট ধারণা পায়নি, তবে এটিই মহাবিশ্বের মোট শক্তির প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি অংশ দখল করে রয়েছে।
সেন্টার ফর নুক্লিয়ার রিসার্চ (CERN) এবং আধুনিক পরীক্ষণ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কণিকা ত্বরণকারী লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (LHC), যা সেন্টার ফর নুক্লিয়ার রিসার্চ বা CERN-এ অবস্থিত, ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে তথ্য আহরণের জন্য বিশেষ গবেষণা চালাচ্ছে। এখানে কণা পর্যবেক্ষণ ও সংঘর্ষের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে এবং তার গুণাবলী চিহ্নিত করতে। এই পরীক্ষাগুলো থেকে পাওয়া ডেটা মহাবিশ্বের এই অদৃশ্য উপাদানগুলোকে বুঝতে সহায়তা করছে।
ভবিষ্যতের গবেষণার দিকনির্দেশনা
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র এবং মহাকাশ অবজারভেটরির মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির প্রকৃতি সম্পর্কে আরও গভীর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। যেমন, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) "Euclid" মিশন এবং নাসার "Nancy Grace Roman Telescope" মহাকাশে এই শক্তিগুলোর প্রভাব অধ্যয়নের জন্য পরিকল্পিত। এই গবেষণাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের মহাবিশ্বের গঠন, বিস্তার এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে এক নতুন ধারণা প্রদান করবে।
ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি এখনো অজ্ঞাত, কিন্তু তারা আমাদের মহাবিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের গোপন রহস্য উন্মোচনে আধুনিক বিজ্ঞানের যে সংগ্রাম, তা মানব ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ধাঁধার উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা এক অদম্য যাত্রায় রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের বিশ্বদৃষ্টিকে বিস্তৃত করে দিচ্ছে।