পোর্টুলাকা: যে ফুল শুধু চোখে নয়, মুগ্ধ করে মনেও!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সকালে চোখ খুলেই যদি বারান্দায় ফুটে থাকা ছোট্ট কিন্তু ঝলমলে একটা ফুল দেখেন, দিনটাই যেন হালকা হয়ে যায়! এই ফুলের নাম পোর্টুলাকা—বেশিরভাগ মানুষ একে শুধুই একটি শোভাময় গাছ হিসেবে দেখেন, কিন্তু বাস্তবে এটি একাধারে রূপের বাহক, প্রকৃতির যোদ্ধা, আর নগর কৃষির নির্ভরযোগ্য সাথী। এই গাছের পেছনে নেই কোনো বিজ্ঞাপনের জাঁকজমক, নেই কোনো দামি নার্সারির লেবেল—তবু এটি আপন মনে ফুল ফোটায়, পরিবেশের ভার লাঘব করে আর বাগানপ্রেমীদের মনের কোণে জায়গা করে নেয়।
রোদপোড়া শহরের শান্তদূত - পোর্টুলাকা যেন প্রকৃতির সেই ছোট্ট সেনা, যে কড়া রোদের মধ্যেও ক্লান্ত হয় না। হোক না সেটা ছাদের কোনা, বারান্দার টব, কিংবা ভাঙা দেয়ালের ফাটল—যেখানে একটু মাটি আর সূর্য আছে, সেখানেই সে ঘর বাঁধে।
এটি একটি সাকুলেন্ট গাছ—মানে নিজেই নিজের শরীরে পানি জমিয়ে রাখে। অতএব, আপনি যদি সপ্তাহে দুইবার ভুলেও পানি দিতে না পারেন, তবু সে ক্ষোভ প্রকাশ করবে না। বরং একদিন সকালেই দেখা যাবে, হাসিমুখে রঙিন একটি ফুল ফুটে উঠেছে।
সকালবেলার শিল্পকর্ম - সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এই ফুল সূর্যের সাথে কথা বলে। সকালবেলা সূর্য উঠলে সে চোখ মেলে, আর বিকেলের পর ঘুমিয়ে পড়ে। কেউ কেউ তাই একে বলেন "টেন ও'ক্লক ফ্লাওয়ার"—কারণ বেশিরভাগ ফুল ঠিক সকাল ১০টার দিকে ফোটে। এই জীবন্ত ঘড়ি যেন আমাদের শেখায় প্রকৃতির ছন্দে চলার সৌন্দর্য।
গুণেও কম যায় না- যদিও সবাই এটিকে শুধুই সৌন্দর্যের উৎস ভাবেন, কিছু জাতের পোর্টুলাকার পাতা আসলে খাওয়া যায়। এতে রয়েছে—
☞ ভিটামিন A, C এবং E
☞ প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
☞ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
_ বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এই গাছ একটি পুষ্টিকর সালাদ উপাদান হিসেবেও পরিচিত। তবে বাংলাদেশে এখনো খাওয়ার চেয়ে এটি সৌন্দর্য ও ছাদবাগানের জন্যই বেশি ব্যবহৃত।
শৌখিন কৃষকের নিঃশব্দ সহচর- নতুন বাগান করতে চাচ্ছেন, কিন্তু সময় নেই বা জায়গা কম? পোর্টুলাকা ঠিক আপনার জন্যই। এটি—
⇨ টবে বা ট্রেতে চাষ করা যায়
⇨বছরে কয়েকবার ফুল ফোটায়
⇨কাটিং করলেই নতুন চারা হয়
⇨খুব কম যত্নেই বেঁচে থাকে
⇨আপনি যখনই বাগানে ক্লান্ত, পোর্টুলাকা তখন নিজেই একটা রঙিন চমক এনে আপনাকে আবার উদ্যমী করে তুলবে।
গাছটি লাগাবেন কীভাবে?
⇨পুরো রোদে রাখুন—দিনে অন্তত ৫ ঘণ্টা
⇨পানি দিন সপ্তাহে ২-৩ দিন, মাটি শুকিয়ে গেলে
⇨প্লাস্টিক নয়, সিমেন্ট বা মাটির টব ভালো
⇨ড্রেনেজ যেন ভালো হয়, না হলে গাছ পচে যাবে
⇨পুরনো গাছ থেকে কাটিং নিয়ে সহজেই চারা তৈরি করুন
রঙের উৎস, জীবনের পাঠ- পোর্টুলাকা আমাদের শেখায়—কখনো কখনো জীবনের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে সাধারণ জায়গাতেই। কোনো দামি পাত্রে নয়, কোনো সাজানো কৃত্রিম সেটআপেও নয়—এই ফুল ফোটে মাটির টবেও, রোদেলা জানালার ধারে কিংবা ইটের দেয়ালের ফাটলেও।
এই ফুল শুধু নয়নভরানো নয়, বরং নগর জীবনের ব্যস্ততার মাঝে এক টুকরো প্রশান্তি।
আপনি কি জানেন????- পোর্টুলাকার কিছু জাত এত দ্রুত বেড়ে ওঠে যে মাত্র এক সপ্তাহেই একটি ছোট কাটিং থেকে একটি টব ভরে যায় ফুলে ফুলে। প্রকৃতির এমন অপার বিস্ময় ঘরের কোণে রাখলে কে না চায়?
আজই টব বেছে নিন, মাটি দিন, আর এক চিমটি ভালোবাসা—পোর্টুলাকা বাকি সব নিজেই করে নেবে।