গ্যাস্ট্রিক সমস্যা: আধুনিক জীবনের একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
গ্যাস্ট্রিক বা পাচনতন্ত্রের সমস্যা এখন বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনে একটি সাধারণ এবং উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, জীবনযাত্রার অস্থিরতা এবং মানসিক চাপের মাত্রা বাড়ার ফলে হজমতন্ত্রের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তিতে ফেলছে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে পেটে অম্লতা, ফুসফুস ফুলে যাওয়া, বদহজম, জ্বর, এবং পেটের ব্যথা। বেশিরভাগ সময় এ সমস্যা সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, অনিয়মিত খাবার খাওয়া, ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, কিংবা অতিরিক্ত কফি বা মদ্যপান করার কারণে।এই লক্ষণগুলো সাধারণত হজম প্রক্রিয়ার বিঘ্ন ঘটার ফলে দেখা দেয়। মূলত, পাকস্থলীর পরিমাণের চেয়ে বেশি অ্যাসিড উৎপাদন, খাদ্যনালীর পেশীর দুর্বলতা বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর মধ্যে সঠিক বন্ধন না থাকার কারণে এসব সমস্যা দেখা দেয়।
তাছাড়া, মানসিক চাপ ও উদ্বেগের ফলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তীব্র আকার নিতে পারে, যা হজমতন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বোঝায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি গবেষণা থেকে জানা যায়, আজকের আধুনিক জীবনধারায় অতিরিক্ত ফাস্টফুড, ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল সেবন বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস্ট্রিক রোগের হার অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় কাজের চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এসব সমস্যা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে।
গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) অন্যতম সাধারণ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা। এই অবস্থায় পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে, যা বুক জ্বালা বা হিটবার্নের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে। GERD নিয়ন্ত্রণ না করলে খাদ্যনালীর ক্ষত বা প্রদাহ হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি করে।
ডায়েটিশিয়ানরা পরামর্শ দেন, নিয়মিত তাজা ফলমূল, সবজি ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে হজম সুস্থ থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা ও রাতে ভারি খাবার এড়ানো গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শরীরচর্চাও হজমতন্ত্রের গতি বাড়িয়ে ফুসফুস ফুলে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়। শরীরচর্চা, বিশেষ করে নিয়মিত হাঁটা ও যোগব্যায়াম গ্যাস্ট্রিকের জন্য উপকারী। এটি হজমতন্ত্রের গতিশীলতা বাড়িয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত গ্যাস ও ফুসফুসের সমস্যা কমায়। আরও বলা হয়, ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে, কারণ এগুলো পাকস্থলীর আসিড বাড়ায় ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে তীব্র করে।
তবে, দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর গ্যাস্ট্রিক সমস্যা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এই ধরনের লক্ষণ জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন আলসার, সংক্রমণ বা কোনো ধরনের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সারের ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইন মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গ্রহণ এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। আধুনিক জীবনের চাপ, অসম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ও স্থূলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস্ট্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কোনো সাধারণ অস্বস্তি নয়, এটি শরীরের সতর্কবার্তা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা আমাদের হজমতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারি এবং সুখী, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হতে পারি।