সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০ ঘর ভেঙে দিল দখলবাজরা

সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০ ঘর ভেঙে দিল দখলবাজরা
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পাবনায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আশ্রয় প্রকল্পে থাকা পরিবারগুলোকে তুলে দিয়ে মুজিব শতবর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘর ভেঙে দিল দখলবাজ সন্ত্রাসীরা। মাথা গোঁজার ন্যূনতম আশ্রয়টুকু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এমন নৃশংস ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এই হতদরিদ্রদের পুনর্বাসনের দাবি স্থানীয়দের।

ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান জানান,প্রশাসনকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।সারাদেশের ভূমিহীনদের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়েছিলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণের। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ‘মুজিব শতবর্ষ’ পরিকল্পনা নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা । এই কর্ম-পরিকল্পনার অংশ ছিল আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর ফলে সারাদেশে প্রায় ১৪ লাখ গৃহহীন মানুষ ঘর পেয়েছিলেন।

এই মহাপরিকল্পনার আওতায় পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া এলাকায় ঘর পেয়েছিলেন ভূমিহীন ৬০টি পরিবার। জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী আন্দোলন শেষে ৫ই আগস্টের পর শুরুতেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় দখলবাজি শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় গৃহহীনদের তাড়িয়ে দিয়ে ঘরগুলো দখল করে নেয় স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মী ও দখলবাজরা। কোথাও কোথাও দখল নেওয়া ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে নিজেরা ভাড়া আদায় করছে। অনেক জায়গায় চাঁদা তোলা হচ্ছে নিয়মিত মাসিক ভিত্তিতে।

ভাড়ারা ইউনিয়নের জামুয়া এলাকার এই সরকারি জমির ওপর নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের। তাঁরা সরকারি খাস জমিটি নিজেদের দাবি করে দখলের পাঁয়তারা করতে থাকে।

গত বছরের ৮ই আগস্ট রাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে অস্ত্রধারী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। যারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। তাদের তাড়িয়ে দিয়ে জায়গা খালি করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয় নিলে জায়গা নিয়ে টাঙ্গাইল জেলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা চলমান আছে। দাবি করে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় আকরাম প্রামাণিক, উম্মত প্রামাণিক, আক্কাস প্রামাণিক, ইসমাইল প্রামাণিকসহ স্থানীয় চক্রটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, আশ্রয়ণ প্রকল্পরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের ঘর-বাড়ি বা জমি-জমা কিছুই ছিল না। সরকার আমাদের দুই বছর আগে দুই কাঠা জমিসহ ঘর দেয়। এর পর থেকে ভালই ছিলাম। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর থেকে স্থানীয় অস্ত্রধারীরা ঘর ছেড়ে আমাদের অন্যত্র চলে যেতে বলে। একপর্যায়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘর থেকে বের করে দেয়। কোথায়ও যাওয়ার জায়গা না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ঘর পাওয়ার পর ভালই চলছিল। বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন ফলের গাছ ও শাক-সবজির আবাদ করেছিলাম। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার সাজানো গোছানো ঘর ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। লুট করে নিয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্র। আমার এখন মাথা গোঁজার কোনো জায়গা নেই। পরিবার নিয়ে এই শীতে বাঁধের ওপর অস্থায়ী ঘর করে থাকতে বাধ্য হয়েছি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার।

অভিযোগ রয়েছে, এই প্রামাণিক গং স্থানীয় বিএনপি নেতা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। উভয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে তাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক। জুলাই-আগস্টে তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ৫ই আগস্টের পর থেকে তারা এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়, তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে চক্রটি। একই ধারাবাহিকতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি খাস জমিটির দখল নিয়েছে প্রামাণিক গং। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করেছে ভুক্তভোগী


সম্পর্কিত নিউজ