মিথ্যার মুখোশের আড়ালে: কেন মানুষ মিথ্যা বলে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সত্যকে পাশ কাটিয়ে মিথ্যার আশ্রয়—এ যেন মানবসমাজের চিরন্তন এক দ্বন্দ্ব। কেউ বলে আত্মরক্ষার জন্য, কেউ বলে সুবিধার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়: মানুষ আসলে কেন মিথ্যা বলে? আর এর পেছনে কি মানসিক কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে?
ব্যক্তিত্ব, চাহিদা ও মানসিক চাপের যোগসূত্র
মানবমন স্বভাবতই জটিল। মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করেছেন, মিথ্যা বলার পেছনে থাকে একাধিক মানসিক ও সামাজিক কারণ। কখনো মানুষ নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে চায়, আবার কখনো চাপে পড়ে সত্য গোপন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত চারটি প্রধান কারণ মানুষের মিথ্যা বলার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে:
১। আত্মরক্ষা: অপরাধ, ভুল বা ব্যর্থতা ঢাকতে অনেকেই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নিজেকে নিরাপদ রাখতে এটিই অনেকের কাছে সহজ উপায়।
২। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা: কখনো কখনো সত্য বললে অপমান বা অগ্রহণযোগ্যতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন মানুষ সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখতে মিথ্যা বলে।
৩। স্বার্থসিদ্ধি: অর্থনৈতিক বা পেশাগত সুবিধা লাভের আশায় অনেকে সচেতনভাবে অসত্য বলেন।
৪। অভ্যাসগত: কিছু মানুষ ছোটবেলা থেকে মিথ্যার চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, যা পরিণত হয় একটি মানসিক অভ্যাসে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও মিথ্যার সম্পর্ক-
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মিথ্যাচার অনেক সময় মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ এবং অপরাধবোধ তৈরি করে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে এই প্রবণতা ব্যক্তির আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মনোবিশ্লেষকদের মতে, "যেসব ব্যক্তি নিজের অনুভূতি প্রকাশে সংকোচ বোধ করেন, কিংবা যাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম, তারা অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে মিথ্যার আশ্রয় নেন।"
ডিজিটাল যুগে মিথ্যার নতুন রূপ-
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে "ছবির মতো জীবন" তুলে ধরার প্রবণতাও এক ধরনের 'আংশিক মিথ্যা'। এখানে মানুষ বাস্তবতাকে আড়াল করে সাজানো জীবনের ছবি দেখাতে চায়। এতে মানসিক চাপ আরও বেড়ে যায়, কারণ বাস্তবতা ও প্রদর্শনের মাঝে পার্থক্য তৈরি হয়।
সমাধানের পথ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মসমালোচনার অভ্যাস, মানসিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খোলামেলা পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ একজন মানুষকে মিথ্যার প্রলোভন থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা—বিশেষ করে ছোটবেলা থেকেই—সত্যবাদিতার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
মিথ্যা হয়তো কখনো কখনো অবলম্বনের পথ মনে হতে পারে, কিন্তু তা কখনো স্থায়ী সমাধান নয়। বরং সত্য—যদিও কঠিন—একটি সুস্থ ও সম্মানজনক জীবনের ভিত্তি। সমাজ ও পরিবার যদি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সংবেদনশীল হয়, তাহলে মিথ্যা বলার প্রবণতা কমানো সম্ভব।
সততা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি এক আত্মবিশ্বাসী মনের সাহসিকতা।