সাইকোলজির জগতে আলোড়ন-কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) কিভাবে কাজ করে?

সাইকোলজির জগতে আলোড়ন-কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) কিভাবে কাজ করে?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা কিংবা হতাশা—এই শব্দগুলো যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। ঠিক এই জায়গায় বর্তমান সময়ে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ও কার্যকর একটি চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে, যার নাম কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা সংক্ষেপে CBT। আজ এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে CBT কীভাবে কাজ করে এবং কেন এটি এত কার্যকর বলে বিবেচিত হচ্ছে।

মনের ভেতরের 'গল্প' বদলালেই আচরণ বদলায়

CBT মূলত এমন একটি মনোরোগ-চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে রোগীর চিন্তার ধারা ও আচরণগত প্রতিক্রিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক বোঝানো হয়। এতে ধরে নেওয়া হয়, আমাদের অনুভূতি ও আচরণের পেছনে কাজ করে চিন্তার ধরন। CBT সেই চিন্তার মডেলগুলোকে চিহ্নিত করে তা বদলানোর মাধ্যমে আচরণে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে।

যেমন ধরুন, একজন ব্যক্তি যদি বারবার চিন্তা করেন, "আমি কিছুতেই সফল হব না", তাহলে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে যাবে এবং কার্যক্রমে অংশ নিতে ভয় পাবে। CBT-র মাধ্যমে তাকে শেখানো হয় সেই নেতিবাচক চিন্তাটি কিভাবে চিনতে হয়, প্রশ্ন তুলতে হয়, এবং বাস্তবতা অনুযায়ী সেটিকে যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তর করতে হয়।
 

থেরাপি কেবল কথার খেলা নয়, এটি গবেষণা-ভিত্তিক একটি প্রক্রিয়া

CBT সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। হতাশা, উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক, ফোবিয়া, খাওয়ার সমস্যা এমনকি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এর মতো নানা মানসিক জটিলতায় এটি কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। CBT-র প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে গঠিত —

☞  প্রথমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা

☞ এরপর কীভাবে সেই সমস্যাগুলোর সঙ্গে আমাদের চিন্তা ও আচরণ যুক্ত, তা বিশ্লেষণ করা হয়।

☞ এরপর গঠনমূলক বিকল্প চিন্তা গড়ে তোলা হয়, যেটি আস্তে আস্তে নতুন আচরণে রূপ নেয়।
 

সময়সাপেক্ষ হলেও প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী

CBT সাধারণত স্বল্প-মেয়াদি থেরাপি হিসেবে পরিচালিত হয়—প্রায় ৮ থেকে ২০টি সেশনেই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। তবে থেরাপির গুণগত মান নির্ভর করে রোগীর সহযোগিতা ও থেরাপিস্টের দক্ষতার ওপর। CBT রোগীকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে গড়ে তোলে—ঘরে হোমওয়ার্ক দেওয়া হয়, চিন্তার ডায়েরি রাখতে বলা হয়, এবং আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে নিজের অগ্রগতি বুঝতে উৎসাহিত করা হয়।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে CBT

দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়লেও এখনো অনেকেই থেরাপির নাম শুনলে দ্বিধায় পড়েন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষিত তরুণ সমাজ, কর্পোরেট কর্মজীবী এবং অভিভাবকদের মধ্যে CBT নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে CBT অনলাইন সেশনেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা এখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও প্রবেশ করছে।

CBT প্রমাণ করে যে মনের গভীর সমস্যাগুলোর সমাধান কেবল ওষুধে নয়, চিন্তার ধরন বদলে দিয়েও সম্ভব। এটি একধরনের মেন্টাল ফিটনেস ট্রেনিং, যেখানে নিজের চিন্তা-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে একে উন্নত করা হয়। আজকের এই দ্রুতগামী ও চাপে ভরা সমাজে CBT যেন হয়ে উঠছে এক নির্ভরযোগ্য মানসিক 'টুলকিট'।

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে যারা নিজেদের ভেতরকার জট খুলতে চান, তাদের জন্য CBT হতে পারে এক আশাব্যঞ্জক দিকচিহ্ন।

সংযুক্ত তথ্য: CBT প্রথম গড়ে ওঠে ১৯৬০-এর দশকে, মনোবিজ্ঞানী অ্যারন বেক-এর গবেষণার ভিত্তিতে। বর্তমানে এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বীকৃত থেরাপি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।


সম্পর্কিত নিউজ