সমকামিতা নিয়ে সমাজ ও ধর্মের দ্বন্দ্বে জটিল বাস্তবতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান সমাজে একটি অদৃশ্য প্রভাব তরুণ-তরুণীদের নৈতিক অক্ষয়তার পথে ঠেলে দিচ্ছে—এটি হলো সমকামিতা। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক জায়গায় যেখানে সমকামিতাকে ব্যক্তিগত অধিকার ও মানবিক মর্যাদার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেখানে আমাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ ও বাংলাদেশে বিষয়টি এখনো নৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
কিছু গোষ্ঠী সমকামিতাকে "ব্যক্তিস্বাধীনতা" বা "অধিকার" হিসেবে উপস্থাপন করলেও এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইচ্ছের বিষয় নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ সামাজিক ও নৈতিক সংকট, যা পারিবারিক ঐক্য ও সমাজের মেরুদণ্ড নড়বড়ে করে দেয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি:
ইসলাম যেমন এটিকে গুরুতর পাপ হিসেবে দেখেছে, তেমনি যেসব ধর্ম মানবিক আদর্শ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয়, সেগুলোতেও এই ধরনের সম্পর্ক সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মের পরিপন্থী বিবেচিত।
☞ ইসলামে, সমকামিতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লুত (আ.)-এর কাহিনী থেকে আমরা শিক্ষা পাই, যেভাবে নৈতিক পতনের কারণে একটি সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। কুরআনে এসেছে:
"তোমরা যৌন তাড়নায় স্ত্রীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের নিকট গমন করছ, তোমরা হচ্ছ এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। " — [সূরা আ'রাফ: ৮ 1]
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে:
"তাদের উপর এক পাথরের বৃষ্টি বর্ষিয়ে দিলাম। তারপর দেখ, অপরাধীদের পরিণতি কী হয়েছিল!"[সূরা আ'রাফ: ৮৪ ]
রাসূল (সা.) সমকামিতাকে 'ফাহিশা' বা সর্বোচ্চ ধরনের অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছেন। যদিও ফিকহি ব্যাখ্যায় শাস্তির ধরন আলাদা হতে পারে, কিন্তু পাপের গাম্ভীর্য অপরিবর্তিত।
☞ হিন্দুধর্ম- প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে যেমন কামসূত্র, তৃতীয় লিঙ্গ ও সমলিঙ্গ যৌনতাকে উল্লিখিত করা হয়েছে, তবে এটি পূর্ণ অনুমোদন নয়।
কিন্তু আধুনিক হিন্দু সমাজে বিষয়টি মূলত অগ্রহণযোগ্য, বিশেষত গৃহস্থাশ্রম ও পরিবারব্যবস্থার কারণে।
বৌদ্ধধর্মে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও নৈতিক আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধর্মও পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেয়।
☞ খ্রিস্টধর্মে শাস্ত্রে পরিবার এবং যৌন নৈতিকতা সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের ভিত্তি। বাইবেলে সমকামিতা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
"If a man lies with a male as lying with as woman, they both committed an abomina- tion; they certainly will die; their blood is upon them. " — (Leviticus 20:13)
যদিও পশ্চিমা বিশ্বে কিছু খ্রিস্টান গির্জা (বিশেষত লিবারেল ডিনোমিনেশন) এখন সমকামীদের বিবাহকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
সমাজে এই প্রবণতা ছড়ানোর পেছনে কী রয়েছে?
আজকের বিশ্বে LGBTQ+ আন্দোলন পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী অংশ হয়ে উঠেছে। মিডিয়া, বিনোদন ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সমকামিতাকে 'স্বাভাবিক' ও 'অধিকার' হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও কিছু বুদ্ধিজীবী ও এনজিও এই বিষয়টিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীত।
প্রবণতা থাকলে করণীয় কী?
প্রবৃত্তিগত দুর্বলতা থাকা অপরাধ নয়। ইসলাম এই বিষয়ে গভীরভাবে সহানুভূতিশীল। কেউ যদি ভেতরে এমন অনুভব করেন, তবে তার দায়িত্ব হলো—আল্লাহর ভয়, ধৈর্য, ও তাওবার মাধ্যমে নিজেকে প্রবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা করা। সহানুভূতি কখনো পাপকে বৈধতা দেয় না।
পারিবারিক ও সামাজিক করণীয়
১. সন্তানদের ইসলামের পরিচ্ছন্ন যৌন নৈতিকতা শেখানো।
২. প্রযুক্তি ও মিডিয়া ব্যবহারে কড়াকড়ি ও নজরদারি।
৩. কুরআন-হাদীসের আলোকে নিয়মিত আলোচনা ও শিক্ষাদান।
৪. মসজিদ, মাদরাসা ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে যুক্ত করা।
৫. সমালোচনা নয়, ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে পথ দেখানো।
সমাজ রক্ষায় একাত্মতা জরুরি
সমাজকে এই ধ্বংসাত্মক ফিতনা থেকে বাঁচাতে প্রথমে দরকার সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা। ইসলাম ঘৃণা ছড়ায় না, বরং হেদায়াত ও সদাচরণের আহ্বান দেয়। তাই সমকামিতার মতো বড় ফিতনার বিষয়ে নীরব থাকা নয়, শিক্ষিত ও নৈতিক আলোকে সমাজকে আলোকিত করা একান্ত কর্তব্য।
সমকামিতা শুধু ইসলামী নয়, বরং সকল ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার পরিপন্থী। এটি পরিবার ও সমাজের মেরুদণ্ড দুর্বল করে। বিশ্বায়িত সমাজে মূল্যবোধের সংঘাত স্বাভাবিক হলেও, মানবিক শ্রদ্ধা ও নৈতিকতার আলোকে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
"সমাজের মেরুদণ্ড হলো সৎ ও নৈতিক মানুষ; যখন এই মেরুদণ্ড দুর্বল হয়, সমাজ ক্ষীণ হয়।"