ভিনগ্রহবাসীর খোঁজে মানব সভ্যতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
একসময় যেটি ছিল শুধুই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি, আজ সেটিই বিশ্বের প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রভাগে। "আমরাই কি এই মহাবিশ্বে একা?"—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা ঘাম ঝরাচ্ছেন রাতদিন। একদিকে যেমন চলছে শক্তিশালী টেলিস্কোপে এক্সোপ্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ, অন্যদিকে গভীর মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে বার্তা, কেউ যদি সাড়া দেয়!
এক্সট্রিমোফাইল: পৃথিবীর কঠিনতম কোণ থেকে শুরু
ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা যাচাই করতে প্রথমেই নজর পড়ে আমাদের নিজের গ্রহে—বিশেষত এক্সট্রিমোফাইল নামে পরিচিত কিছু আশ্চর্য প্রাণীর দিকে। এরা টিকে থাকতে পারে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে, অতিমাত্রায় লবণাক্ত বা অ্যাসিডিক পরিবেশে, এমনকি তীব্র বিকিরণেও। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি পৃথিবীর এমন প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণ বাঁচতে পারে, তবে মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের কোনো গ্রহেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ: প্রাণের ছাপ খুঁজে বেড়ানো
বর্তমানে মহাবিশ্বে যতগুলো এক্সোপ্ল্যানেট চিহ্নিত হয়েছে, তাদের মধ্যে শতাধিক গ্রহে 'হ্যাবিটেবল জোনে' থাকার সম্ভাবনা দেখা গেছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো অগ্রসর প্রযুক্তি দিয়ে এসব গ্রহের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন, মিথেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এমনকি কিছু গ্রহে 'biosignature gas'-এর আভাস পাওয়া গেছে, যদিও তা এখনও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি।
বিশেষভাবে আলোচিত একটি উদাহরণ হলো K2-18b, যেখানে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে পানি বাষ্প ও কিছু জৈব রাসায়নিকের ইঙ্গিত মিলেছে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও সতর্ক—এই উপাদানগুলো অজৈব প্রক্রিয়াতেও তৈরি হতে পারে, তাই আরও গবেষণা প্রয়োজন।
SETI প্রকল্প: শব্দের অপেক্ষায় মহাশূন্য
প্রাণের সন্ধানে সবচেয়ে পুরনো ও ধারাবাহিক প্রকল্পগুলোর একটি হলো SETI (Search for Extraterrestrial Intelligence)। পৃথিবীর বড় বড় রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশের গভীর থেকে আসা অদ্ভুত সিগন্যাল পর্যবেক্ষণ করা হয়। আজ পর্যন্ত কয়েকটি ব্যতিক্রমী সংকেত ধরা পড়লেও তা নিশ্চিতভাবে 'বুদ্ধিমান প্রাণীর' সৃষ্ট কিনা, তা প্রমাণ করা যায়নি।
২০২৪ সালে চিহ্নিত একটি সংকেত, যার উৎস সম্ভাব্যভাবে একটি সূর্য সদৃশ নক্ষত্রের দিক থেকে আসছিল, বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বাড়িয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এটিও প্রকৃত উৎস যাচাইয়ের অপেক্ষায়।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি: স্বপ্ন নয়, প্রস্তুতি
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান কেবল আবেগের বিষয় নয়, এটি বিজ্ঞানের জন্য এক গভীর কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ। প্রাণ চিহ্নিত করতে হলে শুধু রাসায়নিক উপস্থিতি নয়, বরং তার উৎস, ধরণ, পরিবেশগত কার্যকলাপ—সব মিলিয়েই বিশ্লেষণ করতে হয়।
এখন গবেষণার গতি দেখে অনুমান করা যায়, আগামী দশকে হয়তো আমরা প্রথমবারের মতো একটি স্পষ্ট ধারণা পাব—আমরা একা, নাকি কেউ আছে আরেকপ্রান্তে।
প্রশ্নের চেয়ে উত্তরের অপেক্ষা বড়!!
আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে দাঁড়িয়ে হয়তো গ্যালিলিওর মতো কোনো মানুষ ৫০০ বছর আগে আকাশে তাকিয়ে ভেবেছিলেন, "এত তারা, এত গ্রহ—কী আছে ওদের মাঝে?" এখন আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রওনা দিয়েছি, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে। পথ দীর্ঘ, কিন্তু লক্ষ্য পরিস্কার।
পরবর্তী দশক হতে পারে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সময়—যেখানে কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে সেতুবন্ধন গড়বে বিজ্ঞান।