ইলুমিনাতি: ইতিহাসের 'সবচেয়ে রহস্যময়' গোপন সংস্থা সম্পর্কে যা জানা যায়

ইলুমিনাতি: ইতিহাসের 'সবচেয়ে রহস্যময়' গোপন সংস্থা সম্পর্কে যা জানা যায়
ছবির ক্যাপশান, ইলুমিনাতি: ইতিহাসের 'সবচেয়ে রহস্যময়' গোপন সংস্থা সম্পর্কে যা জানা যায়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজ থেকে ২৪৮ বছর আগে ‘ইলুমিনাতি’ নামে একটি গোপন আর বাস্তব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই একই নাম ছিল একটি কাল্পনিক সমাজের, যা বছরের পর বছর ধরে ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উস্কে দিয়েছে।

আজ থেকে ২৪৮ বছর আগে ‘ইলুমিনাতি’ নামে একটি গোপন আর বাস্তব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই একই নাম ছিল একটি কাল্পনিক সমাজের, যা বছরের পর বছর ধরে ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উস্কে দিয়েছে।

অনেকে বিশ্বাস করে ইলুমিনাতি একটি গোপন, কিন্তু রহস্যময় বৈশ্বিক সংস্থা, যার লক্ষ্য বিশ্ব দখল করা, তারাই বিশ্বের বড় বড় বিপ্লব এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলেও মনে করা হয়।

তবে প্রকৃতপক্ষে ইলুমিনাতি কারা ছিল এবং তারা কি সত্যিই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেছে? এই রহস্যময় সমাজ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন ১২টি প্রশ্নের উত্তর থেকে।

জানতে পারবেন এই সমাজের উদ্দেশ্য এবং কারা এর সাথে জড়িত ছিল।

১. প্রকৃত ইলুমিনাতি কারা ছিলেন?

দ্য অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি বা ইলুমিনাতি হলো ব্যাভারিয়াতে (বর্তমান আধুনিক জার্মানির অংশ) প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন সমাজ। যেটার ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত।

এই সমাজের সদস্যরা নিজেদেরকে 'পারফেকশনিস্ট' বা ‘নিখুঁত’ বলে অভিহিত করতো।

ইলুমিনাতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আইনের অধ্যাপক অ্যাডাম উইসাপট। তার উদ্দেশ্য ছিল যুক্তি ও কল্যাণমুখী শিক্ষা প্রচার করা এবং সমাজ থেকে কুসংস্কার ও ধর্মের প্রভাব কমানো।

ইলুমিনাতি মূলত মানুষকে ‘আলোকিত’ করার আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি সংগঠন ছিল।

অ্যাডাম উইসাপট ইউরোপে রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, সরকারের উপর ধর্মের প্রভাব অপসারণ করতে এবং জনগণকে 'আলোর নতুন পথ' দেখাতে চেয়েছিলেন।

ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর প্রথম বৈঠকটি ১৭৭৬ সালের পহেলা মে ইঙ্গলস্ট্যাড শহরের কাছে একটি জঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যেখানে পাঁচজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং ওই পাঁচজন সংগঠনের গোপন আদেশ পরিচালনা করবে, এমন নিয়ম জারি করা হয়েছিল।

সময়ের সাথে সাথে দলটির উদ্দেশ্য কিছুটা পরিবর্তিত হয়। তাদের নতুন লক্ষ্য হয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা, সেইসাথে রাজতন্ত্র ও চার্চের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব কীভাবে ব্যাহত করা যায়, তার উপর মনোযোগ দেয়া।

ইলুমিনাতির কিছু সদস্য পরে তাদের সংগঠনে নতুন সদস্য আনতে অর্থাৎ সদস্য সংখ্যা বাড়াতে ফ্রিম্যাসন সোসাইটিতে যোগ দেয়।

ফ্রিম্যাসন সোসাইটি হলো শুধুমাত্র পুরুষদের নিয়ে গঠিত একটি প্রাচীন গোপন সমাজ, যেখানে সব সদস্য একে অপরকে সাহায্য করে এবং নিজেদের যোগাযোগের জন্য গোপন চিহ্ন ব্যবহার করে।

পরবর্তীতে 'বার্ড অফ মিনার্ভা' নামের একটি পাখি এই সমাজের প্রতীকী চিহ্ন হয়ে ওঠে। বার্ড অফ মিনার্ভার এই বার্ড আসলে একটি পেঁচা, যা রোমান জ্ঞানের দেবী মিনার্ভার প্রতীক।
 

'বার্ড অফ মিনার্ভা'

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,'বার্ড অফ মিনার্ভা'

২. ইলুমিনাতি কীভাবে ফ্রিম্যাসনদের সাথে সম্পর্কিত?

ফ্রিম্যাসন মূলত এমন একটি সমাজ বা সংগঠন যেটি শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা মধ্যযুগের স্টোনম্যাসন (যারা পাথর কেটে নানা রূপ দিতেন) এবং ক্যাথেড্রাল চার্চ নির্মাতাদের গিল্ড থেকে বিকশিত হয়েছিল।

নির্দিষ্ট কিছু দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিম্যাসনদের নিয়ে সবসময়ই বিভ্রান্তি ছিল। এ কারণে ১৮২৮ সালে, ফ্রিম্যাসনদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে এক-দফা লক্ষ্য নিয়ে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে যার নাম ছিল অ্যান্টি-ম্যাসনিক পার্টি।

যেহেতু ইলুমিনাতি তাদের সংগঠনে ফ্রিম্যাসনদের নিয়োগ করেছিল, তাই দু'টি সংগঠন নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

ইলুমিনাতি

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,ইলুমিনাতি তাদের সংগঠনে ফ্রিম্যাসনদের নিয়োগ করেছিল

৩. কীভাবে একজন ইলুমিনাতিতে যোগ দিতে পারে?

কেউ যদি ইলুমিনাতিতে যোগ দিতে চায়, তাহলে তার সেই সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের অনুমতি এক কথায় সর্বসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

সেইসাথে তাদের অঢেল সম্পদের মালিক হতে হবে এবং খ্যাতিমান হতে হবে।

এছাড়াও, ইলুমিনাতিতে সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে, যেখানে কিছু শ্রেণি বিভাজন দেখা যায়।

একজন নতুন সদস্য হিসেবে এই সংগঠনে প্রবেশ করার পর তিনি নভিস পদবি পান। এরপর তিনি হন মিনারভাল। যা কিনা নভিসের এক ধাপ উপরের স্তর। এর চাইতে উপরের স্তর হলো ‘এনলাইটেনড (আলোকিত) মিনারভাল’।

অর্থাৎ সংগঠনটির সদস্যদের এই তিনটি স্তরে ভাগ করা হতো এবং সময়ের সাথে সাথে তারা এক স্তর থেকে উপরের স্তরে উঠতেন।

র‍্যাঙ্ক যতোই বাড়তে থাকে সংগঠনটির নিয়ম তত জটিল হতে থাকে। যেমন: সংস্থাটির পূর্ণ সদস্য হতে হলে ১৩টি শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।

ইলুমিনাতি সদস্যদের প্রচার

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,ইলুমিনাতি সদস্যদের প্রচার

৪. ইলুমিনাতি কী কী নির্দিষ্ট আচার পালন করে?

এটা সত্য যে ইলুমিনাতি বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করতো, যদিও সেই আচারগুলি কী অনেকাংশেই তা জানা যায়নি। এই সমাজের সদস্যদের পরিচয় গোপন রাখতে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হতো।

তবে সামান্য হলেও যে আচার-অনুষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে জানা গিয়েছে, তা থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে কিভাবে নতুনরা সংগঠনের উচ্চ স্তরে প্রবেশ করতো। এসব আচারের মধ্যে রয়েছে:

  • তাদের মালিকানাধীন সমস্ত বইয়ের উপর একটি প্রতিবেদন লিখতে হতো
  • তাদের দুর্বলতার একটি তালিকা করতে হতো
  • তাদের শত্রুদের নাম প্রকাশ করতে হতো

তখন নিয়োগকারীরা তাকে অঙ্গীকার করাতো যে তিনি সমাজের ভালোর জন্য তার ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দেবেন।

সর্বদর্শী চোখ

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,সর্বদর্শী চোখ

৫. সর্বদর্শী চোখ কী?

'আই অফ প্রভিডেন্স' হলো একটি প্রতীকী চিহ্ন কিংবা প্রতীক যেখানে একটি ত্রিভুজের মধ্যে একটি চোখের ছবি দেখা যায়।

এই ছবিটি বিশ্বের বিভিন্ন গির্জায়, ম্যাসনিক ভবনগুলোতে, এমনকি মার্কিন এক ডলারের নোটেও প্রদর্শিত হয়।

এই চিহ্নটি শুধুমাত্র ফ্রিম্যাসনদের সাথেই নয় বরং ইলুমিনাতির সাথেও জড়িত এবং বলা হয় যে এটি সংগঠনটির বিশ্বব্যাপী নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।

তবে এটি একটি খ্রিস্টান প্রতীক বলে জানা গিয়েছে। মানবতার উপর ঈশ্বরের নজরদারিকে ফুটিয়ে তোলে এমন শিল্পকর্মে এই সর্বদর্শী চোখ প্রতীকটি ব্যবহার হয়ে থাকে।

পরে ১৮ শতকে, প্রতীকটি নতুন উপায়ে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৭৮৯ সালে ফরাসি পার্লামেন্ট বা জাতীয় গণপরিষদ গৃহীত একটি মানবাধিকার নথির সচিত্র সংস্করণ পাস হয়। সেখানে এই প্রতীকটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

এর মাধ্যমে সদ্য প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক জাতি পর্যবেক্ষণ করাকে বোঝানো হয়েছে।

এই চিহ্ন এবং ইলুমিনাতির মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। ফ্রিম্যাসন সমাজ এই চিহ্নটিকে তাদের ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করার কারণেই হয়তো প্রতীকটি ইলুমিনাতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। কারণ ইলুমিনাতি ও ফ্রিম্যাসন একসাথে জুড়ে ছিল।

চোখ

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,'আই অফ প্রভিডেন্স' একটি প্রতীকী চিহ্ন যেখানে একটি ত্রিভুজের মধ্যে একটি চোখের ছবি থাকে

৬. ইলুমিনাতি কি বিশ্ব দখলে সফল হয়েছে?

অনেকেই বিশ্বাস করে যে ইলুমিনাতি বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি এমনই এক গোপন সংগঠন যার ব্যাপারে খুব কম লোকই জানে।

যেহেতু ইলুমিনাতির অনেক সদস্য ফ্রিম্যাসন সমাজে যোগ দিয়েছিলেন এবং ফ্রিম্যাসনের অনেকে ইলুমিনাতি দলে যোগদান করেছিল, তাই ইলুমিনাতি একা তাদের লক্ষ্যে কতদূর সফল হয়েছে সেটা বলা মুশকিল।

তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, মূল ইলুমিনাতি সংগঠনের প্রভাব বেশ সীমিত। তারা কেবলমাত্র মধ্যপন্থী হতে পেরেছিল।

মার্কিন এক ডলারের নোটে সর্বদর্শী চোখ

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,মার্কিন এক ডলারের নোটে সর্বদর্শী চোখ দেখা যায়

৭. ইলুমিনাতি গ্রুপের বিখ্যাত সদস্য কারা ছিলেন?

১৭৮২ সালের মধ্যে, ইলুমিনাতি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৬০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তাদের মধ্যে একজন হলেন ব্যারন অ্যাডলফ ভন নিগে, তিনি জার্মান সমাজের অভিজাতদের মধ্যে একজন বলে মনে করা হয়।

তিনি এর আগে ফ্রিম্যাসন সমাজের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাবেক ফ্রিম্যাসন হিসেবে, ইলুমিনাতিকে সংগঠিত ও প্রসারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রাথমিকভাবে, শুধুমাত্র অ্যাডাম উইসাপটের ছাত্ররা ইলুমিনাতির সদস্য ছিলেন, কিন্তু শিগগিরই ডাক্তার, আইনজীবী এবং সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এই দলে যোগ দেন।

বলা হয় যে ১৭৮৪ সালের মধ্যে ইলুমিনাতির সদস্য দুই থেকে তিন হাজারের মত হয়ে যায়। কিছু সূত্র দাবি করেছে যে বিখ্যাত লেখক ইয়োহান ওয়ালফগ্যাং ফন গুঠাও এই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, তবে এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফ্রিম্যাসনের চিহ্ন

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,ফ্রিম্যাসনের চিহ্ন

৮. ইলুমিনাতির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে কখন?

১৭৮৪ সালে, ব্যাভারিয়ার শাসক (ডিউক) কার্ল থিওডর আইন দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কোনও কর্পোরেশন বা সমাজ তৈরি করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

পরের বছর তিনি দ্বিতীয় আদেশ (ডিক্রি) পাস করেন, যেখানে স্পষ্টভাবে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

ওই সময় ইলুমিনাতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানকার সদস্যদের গ্রেফতার করা হতো, তখন বেশ কিছু নথি পাওয়া যায়, যেখানে নাস্তিক্যবাদ (ঈশ্বরে অবিশ্বাস) এবং আত্মহত্যার মত ধারনাকে সমর্থন করা হয়েছিল। সেইসাথে গর্ভপাত করার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।

এসব নথিপত্র থেকে তৎকালীন শাসকদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে যে এই সংগঠনটি রাষ্ট্র এবং চার্চ উভয়ের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তারপর থেকে, অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি সাধারণ মানুষের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। যদিও অনেকের ধারণা যে তারা গোপনে গোপনে ঠিকই সংগঠন টিকিয়ে রেখেছে।

অ্যাডাম উইসাপট

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,অ্যাডাম উইসাপট

৯. অ্যাডাম উইসাপটের পরিণতি কী?

অ্যাডাম উইসাপট ইউনিভার্সিটি অফ ইঙ্গলস্টাডের সাথে যুক্ত থাকলেও পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

এরপর তিনি ব্যাভারিয়া থেকেও নির্বাসিত হন। পরে জার্মানির গোথা শহরে তিনি তার বাকি জীবন কাটান। এই শহরেই ১৮৩০ সালে মারা যান তিনি।

১০. কেন ইলুমিনাতির মিথ আজও টিকে আছে?

ইলুমিনাতি ভেঙে যাওয়ার পরপরই তাদের নিয়ে নানা গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াতে শুরু করে।

১৭৯৭ সালে, ফরাসি ধর্মযাজক অ্যাবে অগাস্টিন বোরেলের ধারণা যে ‘অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি’র মত গোপন সমাজ ফরাসি বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে।

পরের বছর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, ‘তিনি বিশ্বাস করেন ইলুমিনাতির হুমকি কেটে গিয়েছে’।

কিন্তু তার এই ধারণা আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করে এবং জানান দেয় সংগঠনটি গোপনে গোপনে তাদের কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তীতে বিভিন্ন বই ও বক্তৃতায় সংগঠনটিকে নিন্দা করা হয় এবং তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ইলুমিনাতির সদস্য বলে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।

সর্বদর্শী চোখ

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,সর্বদর্শী চোখ

১১. কেন আজও মানুষ ইলুমিনাতিতে বিশ্বাস করে?

ইলুমিনাতি বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, এই ধারণাটি মানুষের মন থেকে সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে যায়নি বরং এটি পপুলার কালচারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

১৯৬৩ সালে, "প্রিন্সিপিয়া ডিসকর্ডিয়া" শিরোনামে নামে একটি বই প্রকাশ পায়, যেখানে ধর্মের বিপরীতে "ডিসকর্ডিয়ানিজম" নামে একটি বিকল্প বিশ্বাস ব্যবস্থার প্রচার করা হয়।

এই ব্যবস্থার ইশতেহারে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নৈরাজ্যবাদ এবং নাগরিক অবাধ্যতা ছড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

ডিসকর্ডিয়ানিজমের অনুসারীর মধ্যে লেখক রবার্ট অ্যান্টন উইলসনও ছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের পিছনে ইলুমিনাতির ভূমিকা ছিল বলে দাবি করে ডিসকর্ডিয়ানিজমের কিছু অনুসারী। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন জার্নালে জাল চিঠিও পাঠায়।

উইলসন পরে রবার্ট শিয়াকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন, যার নাম 'দ্য ইলুমিনাতি ট্রায়োলজি', যেটি ভীষণ জনপ্রিয় হয় এবং এর সর্বাধিক কপি বিক্রি হয়। বইটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিষয়ক সাহিত্যচর্চা ও চলচ্চিত্রের নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে।

যেমন ড্যান ব্রাউনের উপন্যাস "এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস" যা নিয়ে পরে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এটি ওই কথাসাহিত্যের নতুন ধারায় অনুপ্রাণিত সৃষ্টি।

ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ এবং অন্যান্য আদর্শের সাথেও যুক্ত ছিল যার ফলে সংগঠনটি ১৮ শতকের মূল ব্যাভারিয়ান গোষ্ঠীদের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল।

ইলুমিনাতির প্রতীক
ছবির ক্যাপশান,ইলুমিনাতির প্রতীক

১২. নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার কী? ইলুমিনাতির সাথে কীভাবে সম্পর্কিত?

যারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার তত্ত্ব বা ইলুমিনাতিতে বিশ্বাস করে, তারা এটাও বিশ্বাস করে যে একটি অভিজাত গোষ্ঠী বিশ্ব শাসন করার চেষ্টা করছে।

বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও, মার্কিন তারকা বিয়ন্সে ও জে-জি সহ বেশ কয়েকজন পপ তারকা এর সদস্য বলে শোনা গিয়েছে।

যদিও দু'জন তারকাই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারে বিশ্বাসী লোকেরা এটা বিশ্বাস করে যে একটি অভিজাত গোষ্ঠী বিশ্ব দখল করার চেষ্টা করছে।


সম্পর্কিত নিউজ