অজানা আতঙ্কের নাম প্যানিক অ্যাটাক : কারণ, লক্ষণ ও দ্রুত ব্যবস্থাপনা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দ্রুতগতির জীবনে মানসিক চাপ যেন এক অদৃশ্য শত্রু। এমন অবস্থায় এক মুহূর্তে হঠাৎ করে জুড়ে বসে গভীর আতঙ্ক আর নিঃশ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি—যাকে বলে প্যানিক অ্যাটাক। এটি শুধু এক ধরনের মানসিক সমস্যা নয়, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথেও জড়িত একটি জটিল অবস্থা, যা সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেক সময় ভুল বোঝা হয়।
প্যানিক অ্যাটাক: মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত
প্যানিক অ্যাটাক মূলত এক ধরণের তীব্র, আকস্মিক আতঙ্কের অনুভূতি, যা কয়েক মিনিটের মধ্যেই শারীরিক ও মানসিক একদম ভিন্ন মাত্রা ছুঁয়ে যায়। এক্ষেত্রে শরীরে ঘটে এমন পরিবর্তন যা একবার দেখলে সহজে ভুলে যাওয়া যায় না—দ্রুত হৃৎস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, বুকে চেপে ধরা ব্যথা, হাত-পা কাঁপানো, মাথা ঘোরা, এমনকি মৃত্যুর ভয় পর্যন্ত চলে আসে।
অনেকে প্যানিক অ্যাটাককে হৃদরোগের আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেন, কারণ লক্ষণগুলো অনেকটাই মিল রয়েছে। তবে এই রোগগুলো সম্পূর্ণ আলাদা এবং প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু এটির প্রভাব মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও মানসিক স্থিতিশীলতায় গভীর ছাপ ফেলে।
কেন হয় প্যানিক অ্যাটাক?
মানসিক চাপ, দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ, অতীতের কোনও মানসিক ট্রমা বা পারিবারিক সমস্যা প্যানিক অ্যাটাকের প্রধান কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত জীবনে অস্থিরতায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে প্যানিক অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতি যেমন জনসমাগম, উচ্চতা, বা কোনো বড় দুর্ঘটনার স্মৃতিও ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে।
লক্ষণগুলো এক নজরে
১। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া: অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাকের শুরুতেই দ্রুত হৃদস্পন্দনের অনুভূতি হয়, যা হাত দিয়ে ছোঁয়ার মতো স্পষ্ট হয়।
২। শ্বাসকষ্ট: বুকে ফাঁকা না থাকা বা শ্বাস নেয়া কষ্টকর লাগে।
৩। শরীরে ঝিনঝিন ভাব: হাত বা পায়ের আঙ্গুলে অদ্ভুত শূন্যতার অনুভূতি।
৪। মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হওয়ার ভাব: সাময়িক স্নায়ুর অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে মাথা ঘোরা এবং ব্যালেন্স হারানো।
৫। ঠান্ডা ঘাম বা গরম লেগে যাওয়া: হঠাৎ শরীরে তাপমাত্রার ওঠানামা।
৬। 'বাঁচতে পারব না' বা 'পাগল হয়ে যাচ্ছি' এমন মানসিক চাপ।
কী করবেন যখন প্যানিক অ্যাটাক হয়?
১. শ্বাস নিয়ন্ত্রণ: ধীরে ধীরে ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন, ৭ সেকেন্ড ধরে বের করুন। এতে শরীরের অক্সিজেন স্তর ঠিক থাকে এবং মন শান্ত হয়।
২. জমিনে পা রাখুন: নিজের চারপাশের বাস্তব জিনিসগুলোর দিকে মন দিন—যেমন মেঝের স্পর্শ, চারপাশের শব্দ, বা হাত দিয়ে কোনো বস্তুকে ছোঁয়া। এই 'গ্রাউন্ডিং' মস্তিষ্ককে আতঙ্ক থেকে সরিয়ে আনে।
৩. বুক ধীরে ধীরে ছাড়ুন: প্রচণ্ড চাপের কারণে শরীর অনেক সময় বুকে টেনে ধরে। এ সময় ধীরে ধীরে শিথিল করা জরুরি।
৪. বিশ্বাসযোগ্য কারো সঙ্গে কথা বলুন: আত্মীয়, বন্ধু বা সহকর্মীকে জানান, কথা বলার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমে।
৫. অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে সিবিটি (কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি) প্যানিক অ্যাটাক ও উদ্বেগ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সঠিক ওষুধের সাহায্যও নেওয়া হয়। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে, কফি বা অন্য কোনও ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় এড়ানোও প্রয়োজন।
সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন
প্যানিক অ্যাটাক মানসিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুতর বিষয়, যা সমাজে যথাযথ গুরুত্ব পায় না। ভুল তথ্য ও কুসংস্কার এর চিকিৎসা ও পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটায়। সুতরাং সঠিক তথ্য প্রচার এবং আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলা জরুরি।