ঘন ঘন হাত বা পায়ে টান ধরা !! উপেক্ষা নয়, বোঝা জরুরি কারণ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে জেগে উঠে দেখি, পায়ে বা হাতের পেশিতে তীব্র টান। অস্থির ব্যথায় চোখ কপালে। পরিচিত এই পরিস্থিতি অনেকেই নিয়মিতই অনুভব করেন। তবে বারবার এমন হলে, এটিকে আর নিছক 'ঘুমের ব্যাঘাত' ভাবলে চলবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে মাসল ক্র্যাম্প বা পেশিতে টান ধরা।
কেন হয় এমন টান?
শরীরের পেশিগুলো নির্দিষ্টভাবে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু যখন কোনো কারণে ওই সংকোচন বা রিল্যাক্সেশনে বাধা আসে, তখনই পেশি অনিয়ন্ত্রিতভাবে সঙ্কুচিত হয়ে টান লাগে। সবচেয়ে বেশি টান পড়ে পায়ের পেছনের অংশ (কাফ মাসল), পায়ের পাতায় বা হাতের আঙুলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক শারীরিক কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে:
☞ জলস্বল্পতা (ডিহাইড্রেশন): পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়, ফলে পেশিতে টান ধরতে পারে।
☞ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি: এরা পেশির স্নায়বিক সংকেতের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা করে। ঘাটতি হলেই সমস্যা।
☞ অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ও অতিরিক্ত কফি বা অ্যালকোহল সেবন: এদের প্রভাবে শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে রসায়নিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
অতিরিক্ত ব্যায়াম বা দীর্ঘসময় বসে থাকা: নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে টান ধরতে পারে।
☞ গর্ভাবস্থা, ডায়াবেটিস বা স্নায়ুর সমস্যা: এগুলিও অনেক সময় ঘন ঘন টান ধরার পিছনে কাজ করে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
বয়স্করা, যারা নিয়মিত ভারি পরিশ্রম করেন, অথবা যাঁদের দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয়—তাঁদের মধ্যে পেশিতে টান ধরা একটি সাধারণ সমস্যা। পাশাপাশি যাঁরা দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ (যেমন ডিউরেটিক্স বা ব্লাড প্রেশারের ওষুধ) গ্রহণ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘরোয়া প্রতিকারের কিছু সহজ উপায়:
◑ প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার পানি পান করুন।
◑ কাঁচা কলা, নারকেল পানি, লেবুর শরবত বা দই জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
◑ ঘুমানোর আগে হালকা স্ট্রেচিং করুন, বিশেষ করে পায়ের পেশিতে।
◑ ম্যাসাজ বা গরম পানির সেঁক উপকারী হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি?
☞ যদি দিনে বারবার টান ধরে।
☞ যদি টান ছাড়াও পেশিতে দুর্বলতা, অসাড়তা বা ফোলা দেখা যায়।
☞ যদি রাতের ঘুম বারবার ব্যাহত হয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব পড়ে।
হাত বা পায়ে টান ধরা যদিও সাধারণ সমস্যা বলে মনে হয়, কিন্তু এর পেছনে শরীরের বড় কোনো বার্তা লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই উপেক্ষা না করে নিজের খাদ্যাভ্যাস, পানি পান, ঘুম ও শারীরিক সচেতনতা বাড়ান। আর অসুবিধা বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পেশিতে টান ধরা শুধুমাত্র ব্যথা নয়—এটি শরীরের সতর্ক সংকেত হতে পারে। সাবধান থাকুন, সুস্থ থাকুন।