ডান পাশে ঘুমানো কি সত্যিই মস্তিষ্কের জন্য ভালো?

গবেষণার ফলাফল বলছে: আমেরিকার University of Rochester Medical Center–এর ২০২২ সালের এক উল্লেখযোগ্য গবেষণায় দেখা যায়, যারা ডান পাশে ঘুমান, তাদের গ্লিম্ফাটিক সিস্টেম (Glymphatic System) বেশি সক্রিয় থাকে। এটি মস্তিষ্ক থেকে টক্সিন বা বর্জ্য পরিষ্কার করে, বিশেষত "বিটা অ্যামিলয়েড" নামক ক্ষতিকর প্রোটিন, যা অ্যালঝেইমার রোগের জন্য দায়ী।
 

স্মৃতির সঙ্গে সংযোগ:

ঘুমের সময় মস্তিষ্কে "মেমোরি কনসলিডেশন" হয়—অর্থাৎ সারাদিন শেখা বিষয়গুলো দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপ নেয়। গবেষণায় বলা হয়, ডান পাশে ঘুমালে হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতির কেন্দ্রীয় অংশ) সবচেয়ে কার্যকরভাবে কাজ করে।

বাম পাশ বনাম ডান পাশ:

☞ বাম পাশে ঘুমালে হূদযন্ত্র ও পাকস্থলীর ওপর চাপ পড়ে, যা শ্বাসপ্রশ্বাস ও পরিপাকের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

☞ ডান পাশে ঘুমালে রক্তচাপ সুষম থাকে, হৃদপিণ্ডে চাপ কমে, এবং পরিপাকতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করে—ফলে ঘুম গভীর হয়, স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ: সুন্নাহ ভিত্তিক ঘুমের পজিশন

ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঘুমানোর সময় ডান পাশে শোয়া পছন্দ করতেন। এটি শুধু আধ্যাত্মিক নির্দেশনা নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মতও।

সহীহ হাদীস:

"তুমি যখন বিছানায় যাবে, তখন ওযু করে ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়ো।" — (সহীহ বোখারী, হাদীস: ২৪৭)

একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) ঘুমানোর সময় ডান হাত গালের নিচে রাখতেন এবং ডান পাশে কাত হয়ে শুতেন।

ইসলামিক দর্শনের প্রভাব:

◑ সুন্নাহ অনুসরণ করলে শরীর ও আত্মা দুটোই শান্ত হয়।

◑ মনোসংযোগ ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ে, যা মেমোরি এবং আত্ম-উন্নয়নের জন্য সহায়ক।

এভাবে ঘুমানো রূহের স্বচ্ছতা ও হৃদয়ের প্রশান্তি এনে দেয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

 

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

☞ প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।

☞ ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম কমান এবং হালকা ইবাদাত বা মেডিটেশন করুন।

☞ সর্বোপরি, ডান পাশে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

আজকের যান্ত্রিক জীবনে মানুষ যখন মেমোরি সমস্যায় ভোগে, তখন একটি ছোট্ট পরিবর্তন—ঘুমানোর ভঙ্গি—দীর্ঘমেয়াদে বিশাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ইসলামি নির্দেশনা ও আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা একবাক্যে বলছে: "ডান পাশে ঘুমান—স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বাড়ুক অগ্রগতি।"