শিশুর ওষুধ সেবনে সামান্য ভুলেও ঘটতে পারে বড় বিপদ !!

শিশুর ওষুধ সেবনে সামান্য ভুলেও ঘটতে পারে বড় বিপদ !!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শিশুর অসুস্থতা পরিবারে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করে। শিশুর কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে অনেক সময় অভিভাবকরা ওষুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো বা অসচেতন আচরণ করে ফেলেন। অথচ ওষুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন—শুধু ওষুধ নয়, ওষুধ খাওয়ানোর সময়, উপায়, এবং শিশুর অবস্থাও বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিচে শিশুদের ওষুধ সেবনে কিছু সাধারণ কিন্তু মারাত্মক ভুল এবং সঠিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো—
 

☞ ঘুমন্ত শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো বিপজ্জনক

অনেক মা-বাবা ভাবেন, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় শিশুকে ওষুধ দিলে জাগিয়ে তুলতে হবে না—এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ঘুমের সময় শিশুর গিলতে না পারার ঝুঁকি থাকে, ফলে তরল ওষুধ শ্বাসনালীতে ঢুকে 'এস্পিরেশন নিউমোনিয়া' বা শ্বাসরোধ ঘটাতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে।

☞ একাধিক ওষুধ একসঙ্গে খাওয়ানো নয়

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একাধিক ওষুধ একসঙ্গে খাওয়ালে ওষুধের উপাদানগুলো একে অপরের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করতে পারে। অনেক ওষুধের মধ্যে থাকে 'সেডেটিভ ইফেক্ট', যেটি শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর করে দিতে পারে। এমনকি নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক একত্রে নিলে লিভারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

☞ বেশি পরিমাণে বা আন্দাজে ডোজ দেওয়া নয়

শিশুর ওষুধের মাত্রা নির্ধারিত হয় বয়স বা ওজনের ভিত্তিতে। তাই বড়দের ডোজ অর্ধেক করে শিশুকে দেওয়া নিরাপদ নয়। যেমন—প্যারাসিটামলের অতিরিক্ত ডোজ শিশুদের লিভারে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। একইভাবে অ্যান্টিহিস্টামিন বা কাশি কমানোর সিরাপ মাত্রার চেয়ে বেশি খেলে শ্বাসনালীর কার্যকারিতায় সমস্যা হতে পারে।

☞  কাশি বা কান্নার সময় ওষুধ নয়

শিশু যখন কাশি দিচ্ছে বা কান্নায় হাঁপাচ্ছে, তখন মুখে তরল ওষুধ ঢাললে তা সহজেই শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, এমনকি অক্সিজেন স্বল্পতাও দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ ফলাফল হতে পারে 'চোকিং' বা দমবন্ধ হয়ে যাওয়া।
 

সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ:

শিশুর দৃষ্টি ও মনোযোগ ঠিক রেখে, সজাগ অবস্থায় ধীরে ধীরে ওষুধ খাওয়ান।

সিরিঞ্জ বা স্পেশাল মেডিসিন ড্রপার ব্যবহার করলে ডোজ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

প্রতিটি ওষুধের মধ্যে কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট বিরতি দিন (যদি একাধিক ওষুধ লাগে)।

ওষুধ দেওয়ার আগে শিশুর মুখে কিছু তরল পান করানো হলে গলাধঃকরণ প্রক্রিয়া সহজ হয়।

যদি শিশু ওষুধ খেতে না চায়, জোর না করে অন্য সময় চেষ্টা করুন।

 

অবহেলা নয়, সচেতনতাই শিশুর সুরক্ষা

শিশুরা বড়দের মতো শরীরের ভেতরের বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না। অতিরিক্ত ডোজ বা ভুল পদ্ধতিতে দেওয়া ওষুধের ক্ষতি ধীরে ধীরে হলেও গভীর হতে পারে। তাই শিশুর ওষুধ সেবন কখন, কীভাবে, এবং কোন অবস্থায় দেওয়া উচিত—এ বিষয়ে প্রতিটি অভিভাবকের পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত।

শুধু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানো, ওষুধের লেবেল পড়ে ডোজ বুঝে নেওয়া এবং শিশুর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই তিনটি বিষয়ে সচেতন থাকলেই অনেক বড় বিপদ সহজেই এড়ানো সম্ভব।


সম্পর্কিত নিউজ