সাবকনশাস মাইন্ড- কে কাজে লাগিয়ে বদলে ফেলুন জীবনধারা

সাবকনশাস মাইন্ড- কে কাজে লাগিয়ে বদলে ফেলুন জীবনধারা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিই, লক্ষ্য ঠিক করি, বা সমস্যার সমাধানে ভাবি—তখন আমরা ভাবি সবকিছু আমাদের সচেতন মনই নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ আসলে নিয়ন্ত্রিত হয় এমন একটি মানসিক স্তরের দ্বারা যা চুপচাপ কাজ করে যায়—আমাদের না জানিয়ে, না বুঝিয়ে। এই স্তরের নাম সাবকনশাস মাইন্ড বা অবচেতন মন।

সাবকনশাস মাইন্ড কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

অবচেতন মন এমন একটি মানসিক স্তর যা আমাদের চিন্তা, আচরণ, ইচ্ছা, বিশ্বাস, এমনকি শারীরিক প্রতিক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে—সেই মুহূর্তেও যখন আমরা বুঝতে পারি না কেন এমন করছি।
 

আমেরিকার বেশ কিছু স্নায়ুবিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে:

◑  মস্তিষ্কের দৈনন্দিন কার্যক্রমের প্রায় ৯০-৯৫% নির্ধারিত হয় অবচেতন মন দ্বারা।
◑  শুধু ৫-১০% কাজই আমরা সচেতনভাবে করি।

এমনকি আপনি কোন খাবার খেতে চান, কীভাবে কথা বলেন, বা কার প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন—সবকিছুতেই অবচেতন মন কাজ করে।

 

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে: অবচেতন মন কীভাবে কাজ করে?

স্নায়ুবিজ্ঞানের ভাষায়, অবচেতন মন মূলত নিউরাল নেটওয়ার্কের একটি অতি-সংবেদনশীল স্তর যা পুরোনো অভ্যাস, বিশ্বাস, ইমোশন ও স্মৃতিকে ধারণ করে রাখে এবং প্রয়োজন মতো সেগুলো ব্যবহার করে। ঘুম, ধ্যান, ট্রান্স স্টেট, বা গভীর মনোযোগের মুহূর্তে এই স্তরের প্রবেশাধিকার সহজ হয়।
 

কিছু বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা:

আলফা ও থিটা ব্রেইন ওয়েভস যখন সক্রিয় থাকে (বিশেষ করে ঘুমের আগে-পরে), তখন অবচেতন মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি রিসেপ্টিভ অবস্থায় থাকে।

এ সময় দেওয়া তথ্য বা ধারণা অবচেতন মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে যেতে পারে।

এজন্যই বহু সফল ব্যক্তি, খেলোয়াড় বা উদ্যোক্তা রাতে ঘুমানোর আগে positive affirmations বা visualization করে থাকেন।

 

অবচেতন মনকে সক্রিয় ও ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর বৈজ্ঞানিক পন্থা:

১. ভিজ্যুয়ালাইজেশন (চিত্রকল্প কৌশল)

নিজেকে প্রতিদিন কয়েক মিনিট এমনভাবে কল্পনা করুন, যেন আপনি ইতিমধ্যেই নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন। মস্তিষ্ক বাস্তব ও কল্পনার মাঝে অনেক সময় পার্থক্য করে না। আপনি যদি বারবার নিজের সাফল্যের ছবি দেখেন, অবচেতন মন সেই অনুযায়ী বিশ্বাস তৈরি করে এবং শরীর ও মনকে সে পথে চালিত করে।

২. পজিটিভ অ্যাফার্মেশন

সাধারণ, নির্দিষ্ট ও ইতিবাচক বাক্য যেমন:

"আমি আত্মবিশ্বাসী"

"আমি প্রতিদিন উন্নতি করছি"

"আমি যা চাই, তা অর্জন করতে পারি"

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই কথা নিজেকে বললে তা অবচেতন মনে গেঁথে যায়।

৩. রিপিটিশন বা পুনরাবৃত্তি

অবচেতন মন বারবার পাওয়া তথ্যকে 'সত্য' বলে মেনে নেয়। আপনি যদি প্রতিদিন একই পজিটিভ তথ্য নিজের মস্তিষ্কে দেন, ধীরে ধীরে সেটি আপনার চিন্তা ও আচরণে প্রতিফলিত হবে।

৪. সেন্সরি ইনপুট নিয়ন্ত্রণ করা

অবচেতন মস্তিষ্ক চারপাশের ইমেজ, শব্দ ও অনুভবগুলোকে বিশ্লেষণ করে তথ্য ধারণ করে। যদি আপনি সারাক্ষণ নেতিবাচক খবর, সমালোচনা বা হীনমন্যতার বার্তা পান—তবে সেটি আপনার বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। তাই পজিটিভ পরিবেশ, সঙ্গ, ও তথ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. ধ্যান ও মনোসংযোগ

ধ্যান শুধু মানসিক শান্তি দেয় না, এটি ব্রেইনের ওয়েভ প্যাটার্ন পরিবর্তন করে। বিশেষ করে থিটা স্টেট (গভীর মনোসংযোগ) হল অবচেতন মস্তিষ্কে প্রোগ্রাম ঢুকানোর এক আদর্শ অবস্থা। দিনে মাত্র ১০ মিনিট মনোযোগপূর্ণ শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করলেই আপনি এই স্তরে পৌঁছাতে পারেন।

একাধিক মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিতভাবে ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও পজিটিভ ভাবনার অনুশীলন করেন, তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন ও স্ট্রেসের মাত্রা কম এবং ফোকাস ও পারফর্মেন্স বেশি।
 

কেন এখনই প্রয়োজন সাবকনশাস মাইন্ডকে কাজে লাগানো?

আজকের জটিল জীবনব্যবস্থায় শুধুমাত্র মেধা নয়, অভ্যন্তরীণ মানসিক প্রস্তুতি জরুরি। 

আপনার অবচেতন মন যতটা পরিষ্কার, দৃঢ় ও পজিটিভ থাকবে, তত দ্রুত আপনার লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।  তাই সাবকনশাস মাইন্ডকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা খুবই জরুরি, কারণ:

☞ ফোকাস ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায় – অবচেতন মনে ইতিবাচক চিন্তা ও লক্ষ্য গেঁথে দিলে কাজের প্রতি মনোযোগ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। 

☞ খারাপ অভ্যাস বদলাতে সাহায্য করে – বারবার চর্চার মাধ্যমে অবচেতন মনকে নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত করা সম্ভব। 

☞ স্ট্রেস কমায়, স্বাস্থ্যে উপকার আনে – ধ্যান ও পজিটিভ চিন্তার মাধ্যমে অবচেতন মনকে প্রশান্ত রাখলে মানসিক চাপ কমে, যা শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে। 

☞ দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সমস্যার সমাধান দেয় – অবচেতন মন অনেক সময় আমাদের ইনস্টিংকট বা অন্তর্জ্ঞান দিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
 

এই মুহূর্তে নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলার জন্যই সাবকনশাস মাইন্ডকে কাজে লাগানো সময়ের দাবি।


আপনার অবচেতন মন একটি সফটওয়্যারের মতো—আপনি যেভাবে প্রোগ্রাম করবেন, সেভাবেই এটি কাজ করবে। তাই নিজেকে প্রতিদিন ভালো কথায়, ভালো চিন্তায়, এবং সুনির্দিষ্ট অভ্যাসে গড়ে তুলুন। কারণ জীবন বদলানোর সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে আপনার মনের গভীরে—যেখানে কাজ করে সাবকনশাস মাইন্ড।


সম্পর্কিত নিউজ