একটানা বই পড়া শুধু জ্ঞান নয়, বাড়ায় মনোযোগ, স্মৃতি ও সৃজনশীলতার শক্তি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রযুক্তির দাপটে আমরা যখন স্ক্রিনে চোখ রাখছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তখন বই পড়া যেন হয়ে উঠেছে হারিয়ে যাওয়া এক অভ্যাস। অথচ বিজ্ঞান বলছে, নিয়মিত বই পড়া আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এমনভাবে উন্নত করে, যা স্মার্টফোনের স্ক্রলিং কখনোই পারে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, বই পড়া আমাদের নিউরোনের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যখন আমরা একটি বই পড়ি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক একধরনের 'mental simulation' করে—ঘটনাগুলো কল্পনা করে, চরিত্রের মনস্তত্ত্ব বুঝে, আর বাক্যের মানে বিশ্লেষণ করে। এভাবে মস্তিষ্কের একাধিক অঞ্চল একসাথে সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা এটিকে কার্যকরভাবে 'ওয়ার্কআউট' করার মতোই।
বিশেষ করে সাহিত্য পড়া (যেমন উপন্যাস, জীবনী বা গল্পগ্রন্থ) মস্তিষ্কের 'ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক' (DMN) কে সক্রিয় করে। এই অংশটি আমাদের আত্মবিশ্লেষণ, সহানুভূতি ও ভবিষ্যৎ চিন্তার সাথে যুক্ত।
অন্যদিকে, নন-ফিকশন পড়া যুক্তিবোধ, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা বাড়ায়।
একটানা বই পড়ার সময় চোখ, মস্তিষ্ক ও মন একত্রে কাজ করে।
ফলাফল????
বাড়ে মনোযোগের স্থায়িত্ব, যা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রায়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। গবেষণাগুলো বলছে, যারা প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট বই পড়েন, তাদের স্মৃতিশক্তি এবং ভাষাগত দক্ষতা তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত।
এছাড়াও, বই পড়া মানসিক চাপ কমাতে এক কার্যকর উপায়। বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, বই পড়া মস্তিষ্কে 'অক্সিটোসিন' ও 'ডোপামিন'-এর নিঃসরণ ঘটায়—যা মানসিক প্রশান্তি ও ইতিবাচক চিন্তা বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে শুধু পড়া নয়, কীভাবে পড়ছি সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। গভীর মনোযোগসহকারে পড়া, নিয়মিত পড়ার অভ্যাস তৈরি করা, এবং মাঝে মাঝে পাঠের ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করা—এই অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের স্থায়ী উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আজকের দিনে যখন ডিভাইস নির্ভরতা আমাদের মনোযোগ ছিন্নভিন্ন করছে, তখন বই পড়া যেন হয়ে উঠেছে একধরনের মস্তিষ্কের পুনর্জন্ম। বই হাতে নেয়া মানে শুধু গল্প পড়া নয়—এটি এক ধরণের নিরব, গভীর, এবং বিজ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত মানসিক উন্নয়ন যাত্রা।
প্রতিদিন কিছুক্ষণ বই পড়া—এ যেন নিজের মস্তিষ্ককে উপহার দেয়া একান্ত এক সময়। মন খুলে পড়ুন, মস্তিষ্ক আপনিই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।