নারীর জীবনে নীরবে বেড়ে ওঠা শত্রু ,পলিসিস্টিক ওভারির অজানা জটিলতা

নারীর জীবনে নীরবে বেড়ে ওঠা শত্রু ,পলিসিস্টিক ওভারির অজানা জটিলতা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)—নারীদের এক বহুমাত্রিক হরমোনজনিত সমস্যা, যা এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে প্রায় ৮% থেকে ১৩% এই সমস্যায় আক্রান্ত, যদিও অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না কিংবা গুরুত্ব দেন না। বাংলাদেশেও দ্রুত বাড়ছে এই প্রবণতা, বিশেষ করে তরুণ বয়সের কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

কী এই PCOS?

PCOS হলো একটি হরমোন ভারসাম্যহীনতা, যেখানে নারী দেহে পুরুষ হরমোন 'অ্যান্ড্রোজেন'-এর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয় এবং ওভুলেশন বা ডিম্বাণু নির্গমন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু সমস্যাটি এখানেই থেমে থাকে না। এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, বন্ধ্যত্ব, গর্ভধারণে জটিলতা এবং এমনকি এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
 

উপসর্গ যেগুলো উপেক্ষা করা ঠিক নয়:

☞ অনিয়মিত বা অনুপস্থিত মাসিক চক্র

☞ অতিরিক্ত মুখে বা শরীরে লোম গজানো (Hirsutism)

☞ ব্রণ এবং ত্বকের তেলাভাব

☞ চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা মাথার মাঝখানে টাক

☞ দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমাতে অসুবিধা

☞ ক্লান্তি, ডিপ্রেশন বা মনঃসংযোগে সমস্যা
 

PCOS কেবল "মেয়েলি" সমস্যা নয়

বহু গবেষণায় প্রমাণিত যে, PCOS-এর প্রভাব শুধু গাইনোকলজিক নয়—বরং এটি মেটাবলিক সিনড্রোম-এরও একটি অংশ। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, যা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই PCOS মানে কেবল গর্ভধারণের অসুবিধা নয়—বরং দীর্ঘমেয়াদে এটি জীবনমান ও আয়ু কমাতে পারে।
 

কারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রেক্ষাপট:

☞ পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক প্রবণতা

☞ ইনসুলিন সংবেদনশীলতার অভাব

☞ মানসিক চাপ, ঘুমের ঘাটতি

☞ উচ্চ ফ্যাট এবং চিনি-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস

☞ শরীরচর্চার অভাব
 

কী করা উচিত?

☞ মাসিক চক্রে অনিয়ম হলে অবহেলা না করে দ্রুত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা

☞ রক্তে গ্লুকোজ, হরমোন লেভেল এবং আল্ট্রাসাউন্ড করে নিশ্চিত হওয়া

☞ জীবনধারায় পরিবর্তন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম

☞ হাই গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সযুক্ত খাবার পরিহার করে কম কার্ব ও বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া

☞ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

☞ চিকিৎসা হিসেবে নির্ভরযোগ্য কিছু ওষুধ রয়েছে যা হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবে সেগুলো অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মিত জীবনধারায় পরিবর্তন আনলেই উপসর্গ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
 

PCOS এমন একটি সমস্যা যা নীরবে নারীর জীবনের সবখানে ছায়া ফেলতে পারে—শারীরিক, মানসিক ও ভবিষ্যৎ প্রজনন স্বাস্থ্য। সচেতনতা, সময়মতো সঠিক পরীক্ষা এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনাচার—এই তিনেই লুকিয়ে রয়েছে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি।
 

সূত্র: বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও হরমোনজনিত রোগ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য উপাত্তসমূহ


সম্পর্কিত নিউজ