কোয়ান্টাম প্রযুক্তি খুলছে মহাকাশ অন্বেষণের নবদিগন্ত

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি খুলছে মহাকাশ অন্বেষণের নবদিগন্ত
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহিত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

একসময় যে প্রযুক্তি কেবল ল্যাবরেটরির পরীক্ষামূলক সীমানায় সীমাবদ্ধ ছিল, আজ তা হয়ে উঠেছে মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যতের মূল চালিকা শক্তি। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং—একটি ধারণা যা সময়, তথ্য ও বাস্তবতার প্রচলিত ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করছে—এখন ব্যবহার হচ্ছে সুদূর মহাকাশের রহস্য উন্মোচনে।

মহাবিশ্বের প্রকৃতি নিজেই কোয়ান্টাম স্তরে গঠিত। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অভাবনীয় গাণিতিক সামর্থ্য তাকে এক অনন্য স্তরে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রথাগত সুপারকম্পিউটারও অনেক সময় পিছিয়ে পড়ে।
 

বিশ্বব্যাপী মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন NASA, ESA, এবং JAXA, তাদের গবেষণার একাধিক ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম অ্যালগরিদমকে একীভূত করছে। লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার দূরে থাকা গ্রহের আবহাওয়াগত পরিবর্তন থেকে শুরু করে, সৌরজগতের বাইরের গ্রহের সম্ভাব্য বায়ুমণ্ডলের গঠন নির্ধারণ, বা দ্রুতগতির সৌর কণা বিশ্লেষণ—সব ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তি এখন কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
 

বিশেষ করে, কোয়ান্টাম সিমুলেশন ব্যবস্থাপনায় এক বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ধরা যাক, একটি নিউট্রন স্টার ও ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ থেকে উৎপন্ন গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ। সাধারণ কম্পিউটার যেখানে সপ্তাহজুড়ে তথ্য বিশ্লেষণ করত, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সেই বিশ্লেষণ ঘণ্টা কিংবা মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারে।
 

তথ্য বিশ্লেষণের গতি ও গভীরতার এই পরিবর্তন মহাকাশযান চালনায় নতুন মাত্রা এনেছে। অটোনোমাস স্পেসক্রাফট বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলা মহাকাশযানগুলো এখন কোয়ান্টাম সহায়তায় মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম—কোন পথে চলা নিরাপদ, কোন গ্রহে অবতরণ সম্ভব, বা কোন মহাজাগতিক ঝুঁকি এড়ানো উচিত।
 

আরও চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে—"কোয়ান্টাম সেন্সিং"। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন দূরবর্তী মহাজাগতিক ঘটনাসমূহ, যেমনঃ গামা রশ্মি বিস্ফোরণ, ডার্ক ম্যাটারের গতিবিধি, এমনকি ক্ষণস্থায়ী মহাজাগতিক বিকিরণও অনেক নিখুঁতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
 

তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কোয়ান্টাম প্রযুক্তি এখনো অত্যন্ত সংবেদনশীল; সামান্য তাপমাত্রার হেরফের, বা পরিবেশগত পরিবর্তন, কোয়ান্টাম বিটের স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে গবেষকরা 'ফল্ট টলারেন্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটিং' ও 'কোয়ান্টাম এরর কারেকশন' প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছেন।
 

বিশ্বজুড়ে গবেষণাগারে এখন চলছে প্রস্তুতি—যেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং শুধু মহাকাশ নয়, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, এমনকি জেনেটিক্সেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু মহাকাশে এর ব্যবহার যেন এক অনন্ত নাটকের সূচনা—যার পরিণতি এখনো অজানা, কিন্তু যার প্রতিটি পর্ব রোমাঞ্চকর।
 

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি আমাদের নিয়ে যাচ্ছে এমন এক সময়ের দিকে, যেখানে কল্পনা আর বাস্তবতা, গাণিতিক সূত্র আর মহাজাগতিক শক্তির মধ্যকার দূরত্ব ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।

প্রযুক্তির এই নতুন দিগন্ত হয়তো আমাদের পৌঁছে দেবে সেই প্রশ্নের উত্তরেও—'আমরা কি একা?'


সম্পর্কিত নিউজ