ব্যস্ত জীবনে বই পড়ার সহজ ও কার্যকর কৌশল

ব্যস্ত জীবনে বই পড়ার সহজ ও কার্যকর কৌশল
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আধুনিক প্রযুক্তি আর ব্যস্ত জীবনের চাপে বই পড়া অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে বিলাসিতা কিংবা সময়ের অপচয়। তবে সাম্প্রতিক মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণাগুলো বলছে, বই পড়া কেবল তথ্য আহরণ নয়, বরং এটি মস্তিষ্কের এক ধরনের ব্যায়াম, যা মানসিক সুস্থতা, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, মানসিক চাপের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ কোটি মানুষ মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় বই পড়ার অভ্যাস মানসিক চাপ কমানোর একটি প্রমাণিত উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৬ মিনিটের বই পড়া মানসিক চাপ ৬৮% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে, যা সঙ্গীত শোনার চেয়ে বেশি কার্যকর।
 

বই পড়ার সাথে যুক্ত মস্তিষ্কীয় প্রক্রিয়া -
বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে কাজ করে। ভাষা প্রক্রিয়াকরণ, কল্পনা শক্তি, স্মৃতি এবং মানসিক ইম্পিউলস নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র সক্রিয় থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত পড়া নিউরন সংযোগকে শক্তিশালী করে, যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
 

বই পড়ার জন্য সময় ও মনোযোগ তৈরি করার বৈজ্ঞানিক কৌশল-
 

১. মাইক্রো-লেয়ার্ড পড়ার পরিকল্পনা: গবেষণা বলছে, বড় সময় খণ্ডে পড়ার চেয়ে ছোট ছোট পর্বে পড়া বেশি কার্যকর। তাই প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিটের ছোট পর্বে পড়া শুরু করুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে পড়ার জন্য প্রস্তুত করে এবং বিরক্তির মাত্রা কমায়।
 

২. স্নায়ুবৈজ্ঞানিক "রিচার্জ টাইম" নিশ্চিত করুন: দৈনন্দিন কাজের মাঝে ৫-১০ মিনিটের বিরতি দিন। এই সময় বই পড়ার জন্য নিঃশব্দ পরিবেশ তৈরি করুন। মনোযোগী পাঠে ব্রেন 'ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক' সক্রিয় হয় যা চিন্তাশক্তি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
 

৩. ডিজিটাল ডিটক্সের গুরুত্ব: বিশ্বজুড়ে 'ডিজিটাল ডিটক্স' বিষয়ক গবেষণা থেকে জানা যায়, দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট সময় ফোন, কম্পিউটার ও টিভি থেকে দূরে থাকা মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বাড়ায়। ফলে পড়ার প্রতি আগ্রহ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
 

৪. আত্ম-প্রেরণার জন্য নোট ও সারাংশ তৈরি করুন: পড়ার পর বিষয়ভিত্তিক ছোট নোট বা সারাংশ তৈরি করা মস্তিষ্কের 'লং-টার্ম মেমোরি' তৈরি করে। এটি পুনরায় পড়ার সময় স্মৃতি তাজা রাখে এবং পড়া বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
 

৫. পাঠচক্র বা বুক ক্লাবের অংশ হন: সামাজিক আলোচনার মাধ্যমে পড়া বই নিয়ে মতামত বিনিময় মানসিক প্রেরণা বাড়ায় এবং বিষয়বস্তু আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। এতে পাঠক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করেন এবং বই পড়া একা কাজ নয়, বরং সামাজিক অভিজ্ঞতা হয়।
 

বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফলাফল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বই পড়েন, তারা মনোযোগ, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা ও ভাষাগত দক্ষতায় অন্যান্যদের থেকে ২৫% বেশি দক্ষ। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (Cognitive Neuroscience Society) তথ্য অনুযায়ী বই পড়া অবসন্ন মস্তিষ্ক পুনরুজ্জীবিত করে ও ডিমেনশিয়া ঝুঁকি ৩০% পর্যন্ত কমায়।

 

কোন ধরনের বই পড়া উচিত??
বইয়ের ধরন ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রাখা জরুরি। শুধু উপন্যাস নয়, আত্ম উন্নয়নমূলক বই, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সংস্কৃতি বিষয়ক বই পড়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় করে। তবে মনোযোগ ধরে রাখতে সবচেয়ে ভালো কাজ হলো নিজে আগ্রহের বিষয়ে পড়া শুরু করা।


বই পড়া কেবল তথ্য আহরণের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের সুস্থতা, মানসিক চাপ কমানো ও সৃজনশীলতার মূল চাবিকাঠি। বিজ্ঞান প্রমাণ করছে, নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে আপনি নিজেকে মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দৃঢ় ও সুস্থ রাখতে পারেন। তাই ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে ছোট ছোট সময় বের করে বই পড়া শুরু করুন—আপনার মস্তিষ্ক ও জীবন ধন্য হবে।


সম্পর্কিত নিউজ