ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের অদৃশ্য জালে লুকানো সত্য !!

ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের অদৃশ্য জালে লুকানো সত্য !!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেটে যা দেখি—গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ই-মেইল—তা আসলে ইন্টারনেটের মোট কনটেন্টের মাত্র ৪-৫ শতাংশ। বাকি যে বিশাল অংশটি আমাদের চোখের আড়ালে, সেটিই হলো ডিপ ওয়েব এবং তার গভীরতম স্তরটি হচ্ছে ডার্ক ওয়েব। এই অংশে প্রবেশ করতে গেলে শুধু সার্চ করলেই হয় না, লাগে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার, যেমন Tor (The Onion Router)—যা ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখে।

ডার্ক ওয়েব কী?

ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের সেই অংশ, যেটি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি এমন এক জগৎ, যেখানে পরিচয় গোপন রেখে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। তবে এটি শুধু অপরাধের আখড়া নয়—অনেক সাংবাদিক, গবেষক, এমনকি নির্যাতিতরাও এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকেন নিরাপদ যোগাযোগের জন্য।

 

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কেন?

বিগত এক দশকে ডার্ক ওয়েব আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে মূলত এর অপরাধমূলক ব্যবহারের কারণে। এখান থেকেই মানব পাচার, অস্ত্র বিক্রি, মাদক লেনদেন, ভাড়াটে হ্যাকার নিয়োগ ইত্যাদি কাজ পরিচালিত হয় বলে দাবি করে বহু আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা।

২০১৩ সালে FBI 'Silk Road' নামের একটি বিশাল অবৈধ মার্কেটপ্লেস বন্ধ করে দেয়—যা ছিল ডার্ক ওয়েব ভিত্তিক। এই ঘটনা ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট, যা সারা বিশ্বকে ডার্ক ওয়েবের বাস্তবতা সম্পর্কে চমকে দেয়।

 

বৈধ ব্যবহারও রয়েছে - 

ডার্ক ওয়েব মানেই খারাপ নয়। এমন অনেক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা আছে যারা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গোপন উৎসের খবর বা সাংবিধানিক নিরাপত্তার বাইরে থেকে আসা তথ্য সংগ্রহ করে। অনেক দেশেই সেন্সরশিপ এড়িয়ে সত্য প্রচার করতে এটি একটি উপযোগী মাধ্যম।

 

কীভাবে ঢোকা যায় ??

ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের জন্য আপনাকে সাধারণ ব্রাউজার নয়, Tor বা I2P-এর মতো বিশেষ এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হয়। এগুলো আপনার আইপি ঠিকানা লুকিয়ে দিয়ে একাধিক নোডের মাধ্যমে আপনাকে সংযুক্ত করে, ফলে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে যায়। তবে বিপদের দিকও আছে: একবার ভুল ঠিকানায় গেলে আপনি ম্যালওয়্যার, স্ক্যাম কিংবা আইন লঙ্ঘনের মুখে পড়তে পারেন।

 

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে

বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে সাইবার অপরাধের আলামত পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন জোরদার করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব।

ডার্ক ওয়েব কোনো অলীক ভৌতিক জগৎ নয়—এটি বাস্তব, জটিল এবং কখনো ভয়ঙ্কর। এটি যেমন স্বাধীনতার এক মাধ্যম হতে পারে, তেমনি হতে পারে সংঘবদ্ধ অপরাধের নিরাপদ আশ্রয়। তাই এই জগৎ সম্পর্কে জানাটাই যথেষ্ট নয়, বুঝে চলাটাই আসল বুদ্ধিমত্তা।


সম্পর্কিত নিউজ