খাবারের অসতর্কতা থেকেই ছড়ায় ফুড পয়জনিং, যা হতে পারে প্রাণঘাতী

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
খাবার শুধু শরীরের জ্বালানিই নয় এটি সুস্থতা ও অসুস্থতার মাঝের সূক্ষ্ম সীমাও নির্ধারণ করে। সামান্য অসতর্কতা থেকেই শরীরে ঢুকে পড়তে পারে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যজনিত বিষক্রিয়া। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে অনেকেই মারাত্মক জটিলতার শিকার হন।বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুড পয়জনিং মূলত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা টক্সিন-যুক্ত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে হয়।
সাধারণত Salmonella, E. coli, Listeria, এবং Norovirus এই বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী। এমনকি বাসি খাবার, অপরিষ্কারভাবে রান্না করা মাংস কিংবা দূষিত পানি থেকেও এটি ছড়াতে পারে।
➤ লক্ষণগুলো:
ফুড পয়জনিং-এর উপসর্গগুলো খুবই সাধারণ মনে হলেও, অল্প সময়েই তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যেমন:
১। বমি বমি ভাব ও বমি
২। পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া
৩। জ্বর
৪। মাথা ঘোরা বা শরীর দুর্বল লাগা
- এই উপসর্গগুলো সাধারণত খাদ্য গ্রহণের ৬ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ পায়।
বিপদের মাত্রা বুঝুন:
সব ফুড পয়জনিং ঘটনাই যে সামান্য, তা নয়। শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এর মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে ফুড পয়জনিং কিডনি ও লিভারের স্থায়ী ক্ষতি এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
বিজ্ঞান কী বলে??
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু অনেক সময় চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এগুলো ২০ মিনিটের মধ্যে দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই সংক্রমণ বিস্তার পায় দ্রুত। তাই বলা হয়, "ডেঞ্জার জোন" তাপমাত্রা হলো ৫°C থেকে ৬০°C—এই তাপমাত্রার মধ্যে খাবার রাখলে জীবাণুরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সাবধানতার ৫টি বিজ্ঞানসম্মত উপায়:
১. খাবার ভালোভাবে রান্না করুন—বিশেষ করে মাংস, মাছ, ডিম।
২. খাবার ফ্রিজে রাখুন ৫°C বা তার নিচে।
৩. রান্নার আগে এবং পরে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক।
৪. রান্নাঘরের পাত্র ও কাটিং বোর্ড আলাদা রাখুন কাঁচা ও রান্না করা খাবারের জন্য।
৫. খাবার পরিবেশনের আগে "স্মেল টেস্ট" নয়—তারিখ ও সংরক্ষণের নিয়মই বিবেচনা করুন।
বাস্তবতা ও সতর্কতা:
বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও গরম-আর্দ্র পরিবেশে ফুড পয়জনিং ছড়ানোর ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
রাস্তার খাদ্যদ্রব্য, হোটেল-রেস্টুরেন্টের অপরিষ্কার পরিবেশ, এমনকি বাসার অসাবধানতাও হতে পারে বড় বিপদের কারণ।খাদ্য সচেতনতাই ফুড পয়জনিং প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
যা খাচ্ছেন, তাতেই লুকিয়ে আছে আপনার সুস্থতা কিংবা অসুস্থতার বীজ।
ফুড পয়জনিং কোনো দূরবর্তী সমস্যা নয়—এটা আপনার প্লেটেই লুকিয়ে আছে। সতর্ক থাকুন, বিজ্ঞানসম্মত হোন, সুস্থ থাকুন।