ত্বকের দীপ্তি ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক যত্নেই মিলতে পারে চমকপ্রদ ফল

ত্বকের দীপ্তি ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক যত্নেই মিলতে পারে চমকপ্রদ ফল
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ত্বকের সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক রূপচর্চার উপর নির্ভর করে না—এটা একেবারেই বৈজ্ঞানিক বিষয়। ত্বক তার প্রাকৃতিক জেল্লা হারিয়ে ফেলে মূলত দূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে। তবে বিজ্ঞান বলছে, কিছু নিয়মিত অভ্যাস ও প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করলেই ত্বক ফিরে পেতে পারে তার স্বাভাবিক দীপ্তি ও প্রাণবন্ততা।

বিশ্বব্যাপী ডার্মাটোলজিক গবেষণায় এখন পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে যে, ত্বকের কোষের নবায়ন (skin cell regeneration), কোলাজেন উৎপাদন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সক্রিয়তা ত্বকের দীপ্তিতে প্রধান ভূমিকা রাখে। এ তিনটি দিকেই প্রাকৃতিক উপাদান ও কিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
 

খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা

ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যাতে থাকে ভিটামিন C, E, A এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানগুলো শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়িয়ে ত্বককে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বক দেখতে হয় উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বর্ণিল সবজি, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার, এবং পর্যাপ্ত পানি শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে যা ত্বকে প্রতিফলিত হয়।
 

সূর্যের আলো: বন্ধু না শত্রু?

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV Rays) ত্বকের কোলাজেন ধ্বংস করে, যার ফলে ত্বক কুঁচকে যায় ও জেল্লাহীন হয়ে পড়ে। তবে সঠিক সময়ে (সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে) সীমিত সময় সূর্যালোক গ্রহণ ভিটামিন D এর জন্য উপকারী। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে অবশ্যই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।

 

হাইড্রেশন ও ঘুমের প্রভাব

ত্বকের কোষে পানি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করলে কোষে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ত্বক থাকে টানটান। তদুপরি, রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা ব্রণ, কালো দাগ ও ত্বকের নিষ্প্রাণভাব বাড়ায়। ঘুমের সময় শরীর নিজের কোষ মেরামতের কাজ করে, যা ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
 

প্রাকৃতিক উপাদানে সক্রিয় যৌগ

বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন—অ্যালোভেরা, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট, হলুদের কারকিউমিন ও কফির ক্যাফেইন—এদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বকের দাগ, র‍্যাশ এবং কালচে ভাব কমাতে সক্ষম। তবে এগুলোর ব্যবহারে নিয়ম ও পরিমাণ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত বা ভুল পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।
 

মানসিক চাপ ও ত্বক

চাপ বা স্ট্রেস সরাসরি ত্বকের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ত্বকে ব্রণ, র‍্যাশ এবং ত্বকের রঙের তারতম্য সৃষ্টি করে। গবেষণা বলছে, নিয়মিত মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম স্ট্রেস কমিয়ে ত্বকের গ্লো ধরে রাখতে সাহায্য করে।

সংক্ষেপে বলা যায়, ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরিয়ে আনতে কোনও ম্যাজিক ক্রীম নয়, বরং প্রাকৃতিক উপাদান, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও বৈজ্ঞানিক অভ্যাসই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিজের ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন নিলেই ফিরে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত উজ্জ্বলতা—একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত ও স্থায়ীভাবে।


সম্পর্কিত নিউজ