খাবারের সময় বারবার পানি পান করছেন?? এতে হজম নয়, শরীরেই ঘটছে নীরব ক্ষতি!

খাবারের সময় বারবার পানি পান করছেন?? এতে হজম নয়, শরীরেই ঘটছে নীরব ক্ষতি!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

অনেকেই ভাবেন খাবারের সময় পানি খাওয়া একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। কিন্তু সাম্প্রতিক পুষ্টিবিজ্ঞান ও হজমতত্ত্বের গবেষণাগুলো জানাচ্ছে ভিন্ন কথা। এই অভ্যাস যদি মাত্রাহীন হয়, তবে তা শরীরের হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিতে পারে—যার মধ্যে রয়েছে বদহজম, পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক, এমনকি দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসিড রিফ্লাক্স।

খাবারের সময় পানি কেন সমস্যা তৈরি করে?

খাবারের সময় মুখে যে লালারস (saliva) নিঃসৃত হয়, সেটি প্রাকৃতিক হজম এনজাইম ধারণ করে যা খাবারকে প্রাথমিকভাবে ভাঙতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত পানি খেলে এই লালারস পাতলা হয়ে যায়, ফলে এনজাইমগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়।

পাশাপাশি পাকস্থলীতে থাকা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড খাবার ভাঙার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাওয়ার সময় বারবার পানি খেলে এই অ্যাসিডের ঘনত্ব কমে গিয়ে হজমের গতি ধীর হয়ে পড়ে। তার ফলে দেখা দিতে পারে খাবার পর পেট ফাঁপা, অস্বস্তি বা ঘন ঘন ঢেকুর ওঠার মতো লক্ষণ।
 

ইনসুলিন ও রক্তে শর্করার প্রভাব-

খাবারের সময় অতিরিক্ত পানি গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রায়ও প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে ইনসুলিন রেসপন্সে হেরফের ঘটে, যার প্রভাব ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। অতিরিক্ত পানি পানের ফলে পাকস্থলীর গতি হঠাৎ করে বেড়ে গেলে খাবার দ্রুত অন্ত্রে চলে যায়—যা রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
 

লিভার ও কিডনির চাপ বাড়ে-

যখন আমরা খাবারের সময় অতিরিক্ত পানি খাই, তখন তা সরাসরি কিডনির ওপর কাজ করতে শুরু করে। শরীরের তরল ভারসাম্য ঠিক রাখতে গিয়ে কিডনি অতিরিক্ত প্রস্রাব উৎপাদন করে, ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট (যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম) অপচয় হতে পারে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত পানি হজম অঙ্গগুলিকে অপ্রয়োজনীয় চাপের মুখে ফেলে, যার মধ্যে লিভারও অন্যতম।
 

কখন পানি পান করা সবচেয়ে উপকারী?

☞ খাবার শুরুর প্রায় ২০–৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি খেলে তা হজমে সহায়ক এনজাইম সক্রিয় করতে সাহায্য করে।

☞ খাবার শেষে কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে।

☞ যদি খাবার অত্যন্ত শুকনো হয়, তখন অল্প পানি খাওয়া যেতে পারে—কিন্তু প্রতিটি লোকমার সঙ্গে পানি পান অভ্যাসে পরিণত হলে তা ধীরে ধীরে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়।

 

বিকল্প হিসেবে কী করা যেতে পারে?

☞ খাওয়ার আগে লেবু পানি বা হালকা ভেজিটেবল স্যুপ খাওয়া হজমে সহায়ক হতে পারে।

☞ খাবারের সময় ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে পানি খাওয়ার প্রয়োজন কম পড়ে।

☞ প্রচুর সালাদ বা জলীয় ফলমূল (যেমন শসা, তরমুজ) খাবারে রাখলে শরীরের পানির চাহিদাও কিছুটা পূরণ হয়।
 

খাবারের সময় কতটা পানি পান করবেন, তা আপনার শরীরের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া, পানি চাহিদা এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। তবে গবেষণা বলছে, খাবারের ফাঁকে ঘন ঘন পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত, রক্তে শর্করার অস্থিরতা এবং কিডনি-লিভারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

তাই অভ্যাস বদলান, বিজ্ঞান বুঝে পানি পান করুন। পানিই জীবন—সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে পান করলেই তা সত্যিকার অর্থে শরীরের বন্ধু হয়ে উঠবে।


সম্পর্কিত নিউজ